উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের জীবনী
উইলিয়াম শেক্সপিয়ার (William Shakespeare) ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও কবিদের একজন। তাকে “The Bard of Avon” বা “অ্যাভনের কবি” নামেও ডাকা হয়। তার নাটক, সনেট ও কবিতা বিশ্বসাহিত্যের অনন্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। ইংরেজি ভাষার বিকাশ ও নাট্যধারার পরিবর্তনে তার অবদান অসামান্য। নিচে তার জীবন, কর্ম ও প্রভাব নিয়ে একটি বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
শৈশব ও পরিবার
উইলিয়াম শেক্সপিয়ার জন্মগ্রহণ করেন ১৫৬৪ সালের ২৩ এপ্রিল (অনুমানিক তারিখ) ইংল্যান্ডের ওয়ারউইকশায়ারের স্ট্র্যাটফোর্ড-আপন-অ্যাভন (Stratford-upon-Avon) শহরে। তার পিতা জন শেক্সপিয়ার ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী ও শহরের কাউন্সিল সদস্য। মা মেরি আরডেন ছিলেন একজন সম্ভ্রান্ত কৃষক পরিবারের কন্যা।
উইলিয়াম শেক্সপিয়ার আট ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় সন্তান ছিলেন। তার শৈশবকাল কাটে স্ট্র্যাটফোর্ডেই, যেখানে তিনি সম্ভবত স্থানীয় গ্রামার স্কুলে (King’s New School) পড়াশোনা করতেন। এখানে তিনি ল্যাটিন সাহিত্য, ইতিহাস এবং নাট্যকলা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন।
বিবাহ ও পরিবার
১৫৮২ সালে, মাত্র ১৮ বছর বয়সে, শেকসপিয়ার বিয়ে করেন ২৬ বছর বয়সী অ্যান হ্যাথওয়েকে। তাদের তিন সন্তান হয় — সুসান্না, এবং যমজ হামনেট ও জুডিথ। দুঃখজনকভাবে হামনেট মাত্র ১১ বছর বয়সে মারা যায়।
লন্ডনে যাত্রা ও থিয়েটারজগত প্রতিষ্ঠা
১৫৮৫ থেকে ১৫৯২ সালের মধ্যে শেক্সপিয়ার কোথায় ছিলেন তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় নি। এই সময়টিকে “lost years” বলা হয়। ধারণা করা হয়, তিনি এই সময়ে লন্ডনে যান এবং থিয়েটারে কাজ শুরু করেন।
১৫৯২ সালের মধ্যে তিনি একজন নাট্যকার ও অভিনেতা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তখন তিনি লর্ড চেম্বারলেইন’স মেন (Lord Chamberlain’s Men) নামে একটি নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত হন, যা পরবর্তীতে রাজা জেমসের পৃষ্ঠপোষকতায় “দ্য কিং’স মেন” (The King’s Men) নামে পরিচিতি পায়।
শেক্সপিয়ার থিয়েটারের জন্য লেখালেখি করতেন এবং মঞ্চেও অভিনয় করতেন। ১৫৯৯ সালে তিনি ও তার সহকর্মীরা গ্লোব থিয়েটার (Globe Theatre) প্রতিষ্ঠা করেন, যা তার অনেক বিখ্যাত নাটক মঞ্চস্থ করার প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
সাহিত্যকর্ম
শেক্সপিয়ার সাহিত্যকর্ম প্রধানত তিনটি ধারায় বিভক্ত: ট্র্যাজেডি (দুঃখান্ত), কমেডি (প্রহসন), ও ইতিহাস (historical plays)।
ট্র্যাজেডি:
শেক্সপিয়ারের ট্র্যাজেডিগুলো মানবজীবনের গভীর দুঃখ, দ্বন্দ্ব ও দুর্দশাকে উপস্থাপন করে। তার শ্রেষ্ঠ ট্র্যাজেডিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
Hamlet
Othello
King Lear
Macbeth
Romeo and Juliet
এই নাটকগুলোতে তিনি ক্ষমতা, প্রতিশোধ, প্রেম, লোভ, পাগলামী ও মানব দুর্বলতার গভীর বিশ্লেষণ করেছেন।
কমেডি:
শেক্সপিয়ারের কমেডিগুলো হাস্যরস, ভুল বোঝাবুঝি, প্রেম এবং আনন্দময় পরিণতি দ্বারা চিহ্নিত। কিছু জনপ্রিয় কমেডি নাটক:
A Midsummer Night’s Dream
As You Like It
Twelfth Night
The Merchant of Venice
ইতিহাসভিত্তিক নাটক:
তিনি ইংল্যান্ডের রাজাদের জীবনকথা নিয়ে অনেক নাটক লিখেছেন, যার মধ্যে রয়েছে:
Richard III
Henry IV (Parts 1 & 2)
Henry V
সনেট ও কবিতা:
শেক্সপিয়ার ১৫৪টি সনেট (sonnet) রচনা করেন। এগুলো প্রেম, সৌন্দর্য, সময় ও মৃত্যুর চিরন্তন থিমকে কেন্দ্র করে লেখা। তার দীর্ঘ কবিতাগুলোর মধ্যে “Venus and Adonis” এবং “The Rape of Lucrece” উল্লেখযোগ্য।
ভাষা ও প্রভাব
শেক্সপিয়ারের রচনাভঙ্গি ছিল গভীর, অলংকারপূর্ণ ও কাব্যিক। তিনি ইংরেজি ভাষায় প্রায় ১৭০০ নতুন শব্দ এবং বহু প্রবাদপ্রবচনের প্রচলন করেন। অনেক বিখ্যাত উক্তি তার লেখা থেকে এসেছে, যেমন:
“To be, or not to be: that is the question.”
“All the world’s a stage.”
“Some are born great, some achieve greatness, and some have greatness thrust upon them.”
তার নাটকগুলো এখনো বিশ্বজুড়ে পাঠ্যবই, মঞ্চ ও চলচ্চিত্রে বিশাল প্রভাব বিস্তার করছে।
পরবর্তী জীবন ও মৃত্যু
শেক্সপিয়ার তার জীবনের শেষ বছরগুলো স্ট্র্যাটফোর্ডে কাটান। ধারণা করা হয় তিনি ১৬১৩ সালের দিকে থিয়েটার থেকে অবসর নেন। ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল (তাঁর জন্মদিনে) তিনি মৃত্যুবরণ করেন, মাত্র ৫২ বছর বয়সে। তাকে স্ট্র্যাটফোর্ডের হোলি ট্রিনিটি চার্চে সমাহিত করা হয়।
তার কবরের শিলালিপিতে লেখা রয়েছে:
“Good friend, for Jesus’ sake forbear,
To dig the dust enclosed here.
Blessed be the man that spares these stones,
And cursed be he that moves my bones.”
উত্তরাধিকার
শেক্সপিয়ারের মৃত্যুর পরে ১৬২৩ সালে তার নাট্যসঙ্গীরা তার নাটকগুলো সংকলন করে “First Folio” নামে প্রকাশ করেন। এটি এখন ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসে একটি মূল্যবান নিদর্শন।
তার সাহিত্যকর্ম, চরিত্র এবং নাট্যভাবনা সারাবিশ্বের নাট্যকার, কবি, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং দর্শকদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে ও জুগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের বহু ভাষায় তার রচনা অনূদিত হয়েছে এবং আজও মঞ্চে অভিনীত হচ্ছে।
উইলিয়াম শেক্সপিয়ার শুধু একজন কবি ও নাট্যকার নন, বরং তিনি এক বিশ্ব-ঐতিহ্য। মানব মনের জটিলতা, সমাজের বৈপরীত্য এবং ভাষার সৌন্দর্যকে তিনি যেমনভাবে প্রকাশ করেছেন, তা আজও অতুলনীয়। যুগ যুগ ধরে তিনি সাহিত্য ও নাটকের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে জ্বলজ্বল করে থাকবেন।
তথ্যসূত্র:
Shakespeare’s Life and Work, Britannica
The Oxford Shakespeare
Folger Shakespeare Library archives