স্টিফেন হকিং: এক বিজ্ঞান প্রতিভার গল্প
স্টিফেন হকিং কে ছিলেন?
স্টিফেন উইলিয়াম হকিং ছিলেন একজন ইংরেজ তাত্ত্বিক পদার্থবিদ, মহাবিশ্বতত্ত্ববিদ এবং লেখক। তিনি “আ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম” সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ক বই লিখেছেন। তিনি জীবনের প্রথম দিকে মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতেন, তবুও তিনি পদার্থবিজ্ঞান এবং মহাবিশ্বতত্ত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
স্টিফেন হকিংয়ের জন্ম হয় ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি, অক্সফোর্ডে। তার বাবা ছিলেন একজন জীববিজ্ঞানী এবং মা ছিলেন একজন চিকিৎসা গবেষণা সচিব। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কসমোলজিতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
হকিং-এর অসাধারণ চিন্তা:
ব্ল্যাক হোল থিওরি:তিনি দেখিয়েছেন, ব্ল্যাক হোল থেকে বিকিরণ (Radiation) নির্গত হতে পারে—যা পরবর্তীতে “হকিং রেডিয়েশন” নামে পরিচিত হয়।
টাইম ট্রাভেল ও কসমোলজি: সময়, স্থান এবং মহাবিশ্বের শুরু ও শেষ নিয়ে তার ধারণা বিজ্ঞানে এক নতুন মাত্রা এনে দেয়।
সিঙ্গুলারিটি তত্ত্ব: বিগ ব্যাংয়ের সময় মহাবিশ্ব একটি অতি ঘন বিন্দু থেকে শুরু হয়েছিল, এই তত্ত্বেও হকিংয়ের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
হকিং-এর অসুস্থতা:
২১ বছর বয়সে তিনি মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হন, যা ধীরে ধীরে তার শরীরের কার্যকারিতা কেড়ে নেয়। এই রোগের কারণে তিনি হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতেন এবং কথা বলার জন্য একটি কম্পিউটার ব্যবহার করতেন। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, তিনি মাত্র দুই বছর বাঁচবেন। কিন্তু বিজ্ঞান আর মানসিক শক্তি দিয়ে তিনি ৫০ বছরেরও বেশি সময় পৃথিবীকে আলোকিত করেন।
তিনি হুইলচেয়ারে বসে থেকে ও একটি কণ্ঠস্বর যন্ত্র ব্যবহার করে কথা বলতেন। তার আত্মজীবনী অবলম্বনে তৈরি হয় চলচ্চিত্র “The Theory of Everything” (২০১৪)।
বিখ্যাত বই:
A Brief History of Time (1988)
The Universe in a Nutshell
Black Holes and Baby Universes
Brief Answers to the Big Questions (মরণোত্তর প্রকাশিত)
সম্মাননা ও অবদান:
রয়্যাল সোসাইটির ফেলো
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসিয়ান চেয়ার অব ম্যাথমেটিক্স (আইজ্যাক নিউটনের পূর্বতন পদ)
বিজ্ঞানে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে অসাধারণ ভূমিকা
মৃত্যু:
২০১৪ সালের ১৪ মার্চ, ৭৬ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
স্টিফেন হকিং তার অসামান্য মেধা, অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং বিজ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহের জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি তার কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করতে এবং সাধারণ মানুষের কাছে জটিল ধারণাগুলি পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
স্টিফেন হকিং প্রমাণ করেছেন—দেহের সীমাবদ্ধতা মনের শক্তিকে থামাতে পারে না। তিনি বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক চিরন্তন নক্ষত্র, যিনি জীবন, মহাবিশ্ব ও সময় সম্পর্কে আমাদের ধারণা বদলে দিয়েছেন।
Sources:
NASA – Stephen Hawking: Physicist and Author
BBC News – Obituary: Stephen Hawking
Biography.com – Stephen Hawking Biography