Friday, October 3, 2025
Homeসমাজটেল বাস্তার গুপ্তধন: প্রাচীন মিশরের ধন-সম্পদের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার

টেল বাস্তার গুপ্তধন: প্রাচীন মিশরের ধন-সম্পদের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার

টেল বাস্তার গুপ্তধন: প্রাচীন মিশরের ধন-সম্পদের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার

মিশরীয় সভ্যতা বিশ্বের প্রাচীনতম এবং রহস্যময় এক সভ্যতা। নীলনদের উপত্যকা ঘিরে গড়ে ওঠা এই সভ্যতায় রাজা-ফারাওদের সম্পদ, মন্দির, পিরামিড এবং মমি নিয়ে বহু কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও কিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে ইতিহাস লুকিয়ে রেখেছে অবিশ্বাস্য ধন-সম্পদ। এমনই একটি অঞ্চল হলো টেল বাস্তার, যা ছিল প্রাচীন শহর বাসটেট (Bubastis)-এর ধ্বংসাবশেষ। এই অঞ্চল থেকে আবিষ্কৃত গুপ্তধন প্রাচীন মিশরের ধর্মীয় বিশ্বাস, রাজকীয় অনুদান এবং সাধারণ জনগণের জীবনধারার এক অনন্য দলিল।

বাসটেট শহরের পরিচয়

বাসটেট শহর ছিল প্রাচীন মিশরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নগরী। এটি বর্তমান মিশরের আল-শারকিয়া প্রদেশের টেল এল-বাস্তাহ এলাকায় অবস্থিত। এই শহর ছিল দেবী বাসটেট বা Bastet-এর প্রধান পূজাস্থল। বাসটেট ছিলেন নারীত্ব, মাতৃত্ব, গৃহরক্ষা ও সংগীতের দেবী এবং সাধারণত বিড়ালের মুখাবয়বযুক্ত নারীরূপে চিত্রিত হতেন। ফলে এই শহরটি মিশরের বহু অঞ্চলের মানুষের কাছে পবিত্র স্থান ছিল।

গুপ্তধনের আবিষ্কার

২০০৪ থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েক বছর ধরে মিশরের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও আন্তর্জাতিক দলসমূহের যৌথ খননকার্যে টেল বাস্তারের নিচে আবিষ্কৃত হয় একাধিক ধনভাণ্ডার। এসব ভাণ্ডার মাটির নিচে পাথরের দেয়াল ও স্তম্ভ দ্বারা রক্ষিত ছিল। খননকাজে উঠে আসে:

বিশুদ্ধ স্বর্ণ ও রৌপ্যের অলঙ্কার, যার মধ্যে দেবী বাসটেটের মুখাবয়ব খোদাই করা ছিল।

রঙিন ফায়েন্স (faience)-এর পাত্র ও বয়াম, যা পূজার উপকরণ বহনে ব্যবহৃত হতো।

পাথরের ফলক, যেগুলিতে ধর্মীয় মন্ত্র ও দানকারীর নাম খোদাই করা ছিল।

বিড়াল ও অন্যান্য প্রাণীর মমি, যেগুলিকে দেবী বাসটেটের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়েছিল।

কিছু ক্ষেত্রে পাওয়া যায় স্বর্ণালঙ্কারযুক্ত কাঠের কফিন, যেগুলো সম্ভবত ধনী পুরোহিতদের জন্য তৈরি হয়েছিল।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ

বাসটেট দেবীর পূজা ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিড়াল ছিল তার প্রতীক, তাই বিড়াল হত্যা করাকে মহাপাপ হিসেবে দেখা হতো। বাসটেটের মন্দিরে হাজার হাজার বিড়াল উৎসর্গ করা হতো, এবং তাদের মমি করে রাখা হতো। এই কারণেই টেল বাস্তারে এত বিপুল সংখ্যক বিড়াল মমি পাওয়া গেছে।

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, ধনীরা মন্দিরে স্বর্ণ, রৌপ্য, অলঙ্কার ও দামী সামগ্রী দান করত দেবীর কৃপা পেতে। এই দানগুলো মন্দির কর্তৃপক্ষ সযত্নে সংরক্ষণ করত। সময়ের ব্যবধানে এগুলো গভীর কক্ষে লুকিয়ে রাখা হয়—হয়তো যুদ্ধ বা লুণ্ঠনের আশঙ্কায়।

প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব

টেল বাস্তার গুপ্তধনের এই আবিষ্কার শুধু ধনসম্পদের দিক থেকে নয়, বরং ঐতিহাসিক, সামাজিক ও ধর্মীয় দিক থেকেও অমূল্য। এটি প্রমাণ করে যে মিশরের ধর্মীয় কেন্দ্রগুলোতে কেবল পূজা নয়, বরং অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও রাজকীয় সম্বন্ধও জড়িয়ে ছিল। বাসটেটের মতো দেবীকে ঘিরে এত বিশাল সম্পদ, পশু উৎসর্গ এবং মন্দির নির্মাণ এটাই দেখায় যে প্রাচীন মিশরে নারীত্ব ও মাতৃত্বকে কতটা শ্রদ্ধা করা হতো।

টেল বাস্তার গুপ্তধন আজও প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদদের বিস্মিত করে। একদিকে এটি প্রাচীন মিশরের ধর্মীয় সংস্কৃতির জীবন্ত প্রমাণ, অন্যদিকে এর মাধ্যমে জানা যায় তৎকালীন সমাজে দানের মূল্য, বিশ্বাস ও রাজনীতি কেমন ছিল। এই ধনভাণ্ডার কেবল স্বর্ণ-রৌপ্য নয়, বরং হাজার বছর আগের মানুষের চিন্তা, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের এক নিরব সাক্ষী। এটি নিঃসন্দেহে ইতিহাসের পাতায় এক উজ্জ্বল ও মূল্যবান সংযোজন।

তথ্যসূত্র:

Egyptian Ministry of Tourism and Antiquities

National Geographic (Egypt Archives)

British Museum Collections

PeepulTree.world Live History

Itihasar Golpo
Itihasar Golpohttps://itihasargolpo.com
Step into the past with our unforgettable historical journey. Discover the secrets of history on our captivating journey.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments