বগুড়া মহাস্থানগড়ের ইতিহাস
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে,বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এটি প্রায় ১৭৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এক প্রাচীন নগর। ইতিহাসের প্রমাণ অনুযায়ী, এটি গ্রীক, রোমান, বৌদ্ধ ও হিন্দু সভ্যতার প্রভাব বহনকারী গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। মহাস্থানগড় বাংলাদেশের ইতিহাসে সমৃদ্ধতম নগরগুলোর মধ্যে একটি, যা প্রায় খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী থেকে খ্রিস্টাব্দ সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল।
মহাস্থানগড় কোথায় অবস্থিত কোন জেলায় অবস্থিত
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এটি বাংলাদেশের এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রাচীনতম শহুরে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী পুন্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল। এটি শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত।
মহাস্থানগড়ের পূর্ব নাম কি
মহাস্থানগড়ের পূর্ব নাম ছিল পুণ্ড্রনগর বা পৌণ্ড্রবর্ধন। এটি একসময় পুণ্ড্র রাজ্যের রাজধানী ছিল এবং পৌণ্ড্রবর্ধন নামে পরিচিত একটি ভূখণ্ডের অংশ ছিল। মহাস্থানগড় বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এটি প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে একটি সভ্য জনপদ হিসেবে গড়ে উঠেছিল, যার প্রমাণ প্রত্নতাত্ত্বিক খননে মিলেছে। মৌর্য ও গুপ্ত বংশের রাজাদের সময় এটি রাজধানী ছিল।
মহাস্থানগড় কি জন্য বিখ্যাত
মহাস্থানগড় মূলত প্রাচীন পুণ্ড্র রাজ্যের রাজধানী, একটি ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে বিখ্যাত, যেখানে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী থেকে বসবাস ছিল এবং এটি বৌদ্ধ শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। এই প্রাচীন নগরীটিতে প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর, প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন, যেমন মূর্তি, মুদ্রা, শিলালিপি এবং বিভিন্ন ধাতব সামগ্রী পাওয়া যায়।
মহাস্থানগড়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব
মহাস্থানগড়ের ইতিহাস প্রাচীন বাঙালী রাজ্য ও মাহিস্মতি বা পুণ্যভূমির সঙ্গে যুক্ত। পুরাতাত্ত্বিক গবেষণায় জানা যায়, এটি মূলত পলশের যুগ থেকে জনবসতি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ৬৩৯ থেকে ৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে পুন্ড্রনগরে এসেছিলেন। ভ্রমণের ধারাবিবরণীতে তিনি তখনকার প্রকৃতি ও জীবনযাত্রার উল্লেখ করে বর্ণনা দেন। বৌদ্ধ শিক্ষার জন্য প্রসিদ্ধ হওয়ায় চীন ও তিব্বত থেকে ভিক্ষুরা তখন মহাস্থানগড়ে আসতেন লেখাপড়া করতে৷ এরপর তারা বেরিয়ে পড়তেন দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। সেখানে গিয়ে তারা বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষার বিস্তার ঘটাতেন৷
সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণসেন (১০৮২-১১২৫) যখন গৌড়ের রাজা ছিলেন তখন এই গড় অরক্ষিত ছিল। মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল যার বিরোধ লেগে থাকত তার ভাই নীল এর সাথে। এসময় ভারতের দাক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র নামক স্থান থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ এখানে আসেন। তিনি রাজা পরশুরাম । এই রাজা পরশুরাম রাম নামে ও পরিচিত ছিলেন
ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে আসেন ফকির বেশি দরবেশ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এবং তার শীষ্য। ধর্ম প্রচারক শাহ্ সুলতান বলখী সম্পর্কে রয়েছে আশ্চর্য কিংবদন্তি। কথিত আছে, তিনি মহাস্থানগড় অর্থাৎ প্রাচীন পুন্ড্রনগরে প্রবেশ করার সময় করতোয়া নদী পার হয়েছিলেন একটা বিশাল মাছের আকৃতির নৌকার পিঠে চড়ে।
মহাস্থানগড়ের নামকরণের উৎস নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ এটিকে “মহাস্থান” অর্থাৎ ‘বৃহৎ স্থান’ হিসেবে বোঝায়, আবার কেউ এটিকে ‘মহাস্থানগড়’ অর্থাৎ একটি বড় দুর্গায়িত নগর হিসেবে অভিহিত করেন। এটি শুধু একটি নগরই নয়, বরং প্রাচীন রাজকীয় ও ধর্মীয় কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। এই স্থানের “মহাস্থান” নাম হওয়া সম্বন্ধে স্কন্দপুরাণে একটি আখ্যায়িকা আছে। বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম তপস্যা করার জন্য করতোয়ার তীরবর্তী এ স্থানটিকে আবিস্কার করেন এবং তপস্যার দ্বারা সিদ্ধিলাভ করে এর “মহাস্থান” নাম দেন। উত্তরকালে এ স্থানে পুণ্ড্ররাজ্যের রাজধানী স্থাপিত হলে এটি পুণ্ড্রনগর, পুণ্ড্রবর্দ্ধন, পৌণ্ড্রবর্দ্ধন নামে পরিচিত হয়। ৬৪০ খৃষ্টাব্দে সুপ্রসিদ্ধ চৈনিক পর্যটক য়ুয়ান চোয়াং কামরূপ হতে পৌণড্রবন্ধনে আগমন করেন। তার লিখিত বিবরণ হতে জানা যায় যে তৎকালে করতোয়া অতি বিস্তৃত নদী ছিল। তিনি ইহাকে ক-লো-তু বলে উল্লেখ করিয়াছেন।
প্রাচীন নগরের গঠন ও স্থাপত্য
মহাস্থানগড়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর দুর্গ ও প্রাচীর। নগরটি মূলত চারপাশে উঁচু মাটির বাঁধ ও প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে জানা যায়, এখানে প্রায় ১২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রাচীর ও গভীর খাল ছিল, যা নগরকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতো। নগরের অভ্যন্তরে প্রধান রাস্তা, জলাধার, বাণিজ্যিক এলাকা ও আবাসিক স্থান ছিল।
স্থাপত্যের দিক থেকে এখানে বৌদ্ধ স্তূপ, মঠ, মন্দির এবং রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। বৌদ্ধ স্থাপত্যের মধ্যে প্রধান ছিল শ্রীমহাস্থানবিহার, যা প্রায় খ্রিস্টাব্দ ৫–৭ শতকে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল বৌদ্ধ ধর্মের অধ্যয়ন ও সন্ন্যাসীদের আবাসস্থল। মন্দিরগুলোর দেওয়ালে জটিল ভাস্কর্য ও শিলালিপি খোদাই করা ছিল, যা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনের প্রতিফলন।
মহাস্থানগড়ের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
মহাস্থানগড় ধর্মীয় দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব এখানে সবচেয়ে দৃঢ়। প্রাচীন কাহিনীর ভিত্তিতে জানা যায়, এখানে বিভিন্ন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী মঠে বসবাস করতেন। এছাড়াও হিন্দু ধর্মের প্রাচীন মন্দির এবং দেবমূর্তির নিদর্শন পাওয়া গেছে।
মহাস্থানগড় শুধু ধর্মীয় নয়, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও সমৃদ্ধ ছিল। প্রাচীন সময়ে এখানে বিভিন্ন শিল্প যেমন মৃৎশিল্প, ধাতুবিদ্যা, চিত্রকলা এবং মুদ্রা শিল্প বিকশিত হয়। প্রাপ্ত মুদ্রাগুলোতে রাজা, দেবতা এবং দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন চিত্র খোদাই করা থাকত, যা প্রাচীন সমাজের জীবনধারার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বহন করে।
প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা
মহাস্থানগড়ের প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ১৯৫০-এর দশক থেকে শুরু হয়। বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক জ্ঞানী এই অঞ্চলের প্রাচীন নগর ও ধ্বংসাবশেষ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন। খননের মাধ্যমে নগরের প্রাচীর, দুর্গ, মন্দির, মঠ, স্তূপ এবং রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
বিশেষভাবে, এখানে প্রাপ্ত বিভিন্ন শিলালিপি, মুদ্রা এবং মৃৎপাত্রের টুকরা প্রাচীন নগরের অর্থনীতি, প্রশাসন এবং ধর্মীয় চর্চার তথ্য প্রদান করে। গবেষণায় দেখা গেছে, মহাস্থানগড় প্রাচীন বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র ছিল। এখানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালিত হত।
মহাস্থানগড়ের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব
মহাস্থানগড়ের প্রাচীন রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এটি সময়ে সময়ে বিভিন্ন রাজবংশের রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। পাল ও সেন রাজবংশের শাসনকালে এটি শিক্ষা, ধর্ম এবং বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল।
অর্থনৈতিকভাবে, মহাস্থানগড়ে কাঁচামাল, ধাতু, মৃৎশিল্প এবং অন্যান্য পণ্যগুলোর বাণিজ্য করা হত। স্থানীয় কৃষি এবং জলপথ বাণিজ্যের জন্য সুবিধাজনক ছিল। খাল ও নদীর সংযোগের মাধ্যমে প্রাচীন বাণিজ্য পথগুলো সহজলভ্য ছিল, যা নগরের অর্থনৈতিক শক্তিকে বহুগুণ বৃদ্ধি করেছিল।
সমাজ ও জীবনধারা
মহাস্থানগড়ে বাস করতেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। এখানে কৃষক, বণিক, শিল্পী, সন্ন্যাসী এবং রাজপরিবারের সদস্যরা মিলিতভাবে বসবাস করতেন। নগরের বিভিন্ন স্থানে আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা ও ধর্মীয় স্থানগুলো সুসংহতভাবে বিন্যস্ত ছিল।
প্রাচীন কাহিনীর ভিত্তিতে জানা যায়, এখানে শিক্ষার চর্চাও খুবই সমৃদ্ধ ছিল। বৌদ্ধ মঠ ও বিদ্যালয় শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করতো। এছাড়াও নগরের শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি সমৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া যায়।
প্রদত্ত নিদর্শন ও খোদাই
মহাস্থানগড় থেকে পাওয়া নিদর্শনগুলো প্রাচীন বাঙালীর জীবনযাত্রা, বিশ্বাস, শিল্প ও ধর্মীয় আচার ধারণাকে তুলে ধরে। এখানে পাওয়া শিলালিপি, মুদ্রা, মূর্তি, স্তূপ ও মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ প্রাচীন নগরের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়।
মুদ্রাগুলোতে রাজা ও দেবতার ছবি, শিলালিপিতে প্রশাসনিক নির্দেশনা এবং ধর্মীয় প্রার্থনার খোদাই রয়েছে। এছাড়াও মূর্তিতে মানুষের দৈনন্দিন জীবন, পোশাক, পশুপাখি ও কৃষি কর্মকাণ্ডের চিত্র পাওয়া যায়।
মহাস্থানগড়ের সমকালীন অবস্থা
বর্তমানে মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে সংরক্ষিত। এটি পর্যটক ও গবেষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ। এখানে নিয়মিত খনন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রাচীন নিদর্শনের সংরক্ষণ কাজ করা হচ্ছে।
মহাস্থানগড়ের সংরক্ষণ বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্থানীয় প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রাচীন নগরের ভগ্নাবশেষ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
মহাস্থানগড় কেবল একটি প্রাচীন নগরই নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং অর্থনৈতিক জীবনধারার এক অনন্য নিদর্শন। প্রাচীন সময়ে এটি একটি রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এখানে প্রাপ্ত ধ্বংসাবশেষ, শিলালিপি, মুদ্রা, মূর্তি, স্তূপ ও মন্দিরের নিদর্শন প্রমাণ করে যে, মহাস্থানগড়ের সমাজ ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত, উন্নত শিল্পকলা, শিক্ষালয় এবং ধর্মীয় চর্চায় সমৃদ্ধ।
নগরটি প্রমাণ করে যে, প্রাচীন বাংলার মানুষ কেবল কৃষি ও বাণিজ্যেই নয়, শিল্প, স্থাপত্য এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে কতটা দক্ষ ছিল। বৌদ্ধ মঠ ও হিন্দু মন্দিরগুলো একে প্রমাণ করে যে, এখানে বহু ধর্মের সহাবস্থান ও সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটেছিল। স্থানীয় জনগণ এবং সন্ন্যাসীরা ধর্মীয়, সামাজিক ও শিক্ষাগত কর্মকাণ্ডে নিয়মিতভাবে যুক্ত থাকতেন।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও মহাস্থানগড়ের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। প্রাচীন বাণিজ্যপথের সংযোগ, নদী ও খালের মাধ্যমে বহিঃদেশি বাণিজ্য এবং স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যের বিনিময় নগরকে অর্থনৈতিক শক্তিশালী করেছিল। নগরের প্রশাসন, কর সংগ্রহ, বিচারব্যবস্থা ও সামাজিক নিয়মাবলী প্রমাণ করে যে, এটি প্রাচীন বাংলাদেশের একটি সুসংগঠিত নগর।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো আমাদের অতীতের সঙ্গে বর্তমানকে সংযুক্ত করে। শিলালিপি, মুদ্রা, মূর্তি এবং স্তূপের খোদাই প্রাচীন মানুষের জীবনযাত্রা, ধর্মবিশ্বাস, সামাজিক নিয়ম ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। এগুলো কেবল ঐতিহাসিক নথি নয়, বরং জাতীয় ঐতিহ্যের এক অমূল্য সম্পদ।
আজকের দিনে মহাস্থানগড় আমাদের শিক্ষা দেয় যে, অতীতের সভ্যতা এবং তার সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা আমাদের সমসাময়িক সমাজের জন্য দিকনির্দেশনা। এটি প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও পর্যটনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য এক অমূল্য কেন্দ্র। মহাস্থানগড়ের সংরক্ষণ, গবেষণা এবং পর্যটনমূলক উন্নয়ন প্রমাণ করে যে, আমরা আমাদের অতীতকে শ্রদ্ধা জানাই এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তা সংরক্ষণ করি।
মহাস্থানগড়ের ইতিহাস আমাদের শেখায় যে, প্রাচীন নগরের জীবনযাত্রা, সমাজব্যবস্থা, শিল্পকলা ও ধর্মীয় চর্চা কতটা সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় ছিল। এটি শুধু অতীতের গর্ব নয়, বরং বর্তমানের শিক্ষা ও ভবিষ্যতের চিন্তার জন্য একটি স্থায়ী উৎস। এই নগরের ধ্বংসাবশেষ, নিদর্শন ও সাংস্কৃতিক প্রতিফলন আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ইতিহাসের গভীর অধ্যয়ন ও সংরক্ষণ ছাড়া আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক ও জাতীয় পরিচয়কে পূর্ণভাবে বোঝা সম্ভব নয়।
অতএব, মহাস্থানগড় কেবল একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, সভ্যতা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক চিরন্তন প্রতীক, যা আমাদের অতীতের গৌরবময় অধ্যায়কে সামনে নিয়ে আসে এবং ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান শিক্ষা প্রদান করে।
তথ্যসূত্র:
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর – মহাস্থানগড় প্রত্নতত্ত্ব তথ্য
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ রিপোর্ট
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কিত গবেষণা গ্রন্থসমূহ
প্রাচীন বাঙালি সভ্যতা ও নগর উন্নয়ন সম্পর্কিত প্রবন্ধ