সূর্যের ছায়া দিয়ে প্রাকৃতিক কম্পাস
ভাবুন তো, যদি আপনি প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যান—যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক বা জিপিএস নেই? তখন কীভাবে নির্ধারণ করবেন পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ? উত্তর আছে প্রাচীন এক বিজ্ঞানচর্চায়—সূর্যের ছায়া দিয়ে দিকনির্দেশ নির্ধারণ। এটি কেবল একটি জরুরি কৌশল নয়, বরং মানব সভ্যতার পর্যবেক্ষণশক্তি ও বৈজ্ঞানিক প্রজ্ঞার নিদর্শন।
কিভাবে তৈরি করবেন একটি প্রাকৃতিক কম্পাস?
যা লাগবে:
একটি সোজা কাঠি (প্রায় ৯০ সেমি লম্বা)
দুটি ছোট পাথর
খোলা আকাশের নিচে রোদেলা একটি স্থান
ধাপ ১: প্রথম ছায়াচিহ্ন
মাটিতে সোজা করে কাঠি পুঁতে দিন। সূর্যের আলো পড়লে ছায়া তৈরি হবে। ছায়ার ডগায় একটি পাথর রাখুন—এটি হবে “প্রথম চিহ্ন”।
ধাপ ২: দ্বিতীয় ছায়াচিহ্ন
প্রায় ১০–১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ছায়া সরবে। নতুন ডগায় আরেকটি পাথর রাখুন—এটি হবে “দ্বিতীয় চিহ্ন”।
ধাপ ৩: দিকরেখা আঁকুন
দুটি পাথরের মাঝখানে সরল রেখা টানুন। এটি হলো পূর্ব-পশ্চিম (East–West) দিক।
ধাপ ৪: নিজেকে অবস্থান করুন
বাম পা রাখুন প্রথম পাথরের উপর (পশ্চিম)
ডান পা রাখুন দ্বিতীয় পাথরের উপর (পূর্ব)
এখন আপনার মুখ উত্তর দিকে। পেছনে দক্ষিণ, বামে পশ্চিম, আর ডানে পূর্ব।
এই বিজ্ঞান কীভাবে কাজ করে?
পৃথিবী নিজ অক্ষে পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘোরে। ফলে সূর্য আমাদের কাছে পূর্ব থেকে পশ্চিমে চলমান মনে হয়। ছায়াও সেইমতো ঘুরে যায়। সময়ভেদে ছায়ার দিক পরিবর্তনের এই বৈশিষ্ট্য দিয়েই দিকনির্দেশ নির্ধারণ সম্ভব।
ইতিহাসের আলোকে
প্রাচীন মিশরীয়, গ্রিক এবং চীনা সভ্যতার মানুষরা সূর্যের ছায়া ব্যবহার করে মন্দির নির্মাণ,ক্ষেতচাষের সময় নির্ধারণ এবং ভ্রমণে দিক নির্দেশনা নির্ধারণ করত।
এটি ছিল ধর্ম, বিজ্ঞান ও প্রকৃতির একত্রে জড়িয়ে থাকা একটি সূক্ষ্ম চর্চা।
একটি সাধারণ কাঠি ও দুইটি পাথর দিয়ে আপনি শুধু দিকই নির্ধারণ করছেন না, আপনি ইতিহাস, বিজ্ঞান ও প্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হচ্ছেন। এই অভিজ্ঞতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জ্ঞান সবসময় হাতের কাছেই থাকে, শুধু আমাদের দরকার পর্যবেক্ষণ আর কৌতূহল।
🔍তথ্যসূত্র / Sources:
U.S. Army Survival Manual (FM 3-05.70)
এই ম্যানুয়ালে সূর্যের ছায়া ব্যবহার করে দিক নির্ধারণের পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
Source Link (archive version)
National Geographic – “How to Navigate Without a Compass”
সূর্য, ছায়া এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতির মাধ্যমে দিকনির্দেশ নির্ধারণ সম্পর্কে ব্যবহারিক উদাহরণ।