প্যালেনকুয়ের সমাধির রহস্য
মেক্সিকোর চিয়াপাস রাজ্যে অবস্থিত প্যালেনকু ছিল মায়া সভ্যতার এক গৌরবময় নগরী। এই শহরের হৃদয়ে রয়েছে এক রহস্যময় স্থাপনা—”শিলালিপি মন্দির” (Temple of the Inscriptions)—যার নিচে লুকিয়ে আছে এক আশ্চর্য সমাধি। এই সমাধি আর তার কেন্দ্রীয় পাথরের ফলক আজও গবেষকদের দ্বিধা আর বিস্ময়ের মাঝে রেখেছে।
রহস্যময় পাথরের ফলক: প্রযুক্তির ছোঁয়া?
এই ফলকে খোদাই করা একটি চিত্রে দেখা যায়, এক মানব মূর্তি বসে আছেন এমন ভঙ্গিতে, যা অনেকের চোখে আধুনিক কোনও রকেট বা যানবাহনের চালকের আসনের মতো। তাঁর হাতে রয়েছে নিয়ন্ত্রণযন্ত্র সদৃশ কিছু, এবং পেছন থেকে যেন বের হচ্ছে আগুন বা ধোঁয়া। এমনকি কিছু বিশ্লেষক বলেছেন, সেখানে দেখা যায়:
এর্গোনমিক আসন
শ্বাসপ্রশ্বাসের সরঞ্জাম
বায়ুগত সিলিন্ডার বা চেম্বার
এই উপাদানগুলো অনেকের চোখে একটি উড়ন্ত যান বা মহাকাশযানের অভ্যন্তরের সঙ্গে তুলনীয়।
বহির্জাগতিক যোগাযোগের তত্ত্ব
এই রহস্যচিত্র নিয়ে বিশ্বজোড়া আলোচনার সূত্রপাত ঘটে ১৯৬৮ সালে, যখন সুইস লেখক এরিক ভন ডানিকেন তাঁর জনপ্রিয় বই Chariots of the Gods এ দাবি করেন, এটি প্রাচীন এলিয়েন প্রযুক্তির একটি প্রমাণ। তাঁর মতে, প্যালেনকু শুধু একটি ধর্মীয় নগরী ছিল না, বরং হয়তো ছিল বহির্জাগতিক প্রাণীদের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের একটি কেন্দ্র।
ডানিকেন এ ধরনের আরও নিদর্শনের উদাহরণ দেন, যেমন পেরুর নাজকা লাইনস—যা শুধু আকাশপথ থেকে পুরোপুরি দেখা যায়। তাহলে কি প্রাচীন মানুষরা নিজেরাই প্রযুক্তিতে দক্ষ ছিল, না কি তারা অন্য কোনো উন্নত জাতির সহায়তা পেয়েছিল?
প্রচলিত প্রত্নতত্ত্বের ব্যাখ্যা
অন্যদিকে, মূলধারার প্রত্নতত্ত্ববিদেরা বলেন—এই ফলকটি একধরনের ধর্মীয় রূপক, যা মায়া বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যুর পর আত্মার যাত্রাকে চিত্রিত করে। মূর্তিটিতে চিত্রিত ব্যক্তি হলেন রাজা পাকাল, যিনি মৃত্যুর পরে পাতাল জগতে প্রবেশ করছেন, যা মায়াদের কল্পনায় এক আধ্যাত্মিক ভ্রমণ।
তাহলে, কোনটি সত্য?
রকেট চালক নাকি ধর্মীয় প্রতীক?
প্রাচীন প্রযুক্তি নাকি শিল্পকৌশল?
কল্পনা নাকি বাস্তব ইঙ্গিত?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আজও পুরোপুরি অমীমাংসিত। তবে এটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায়—প্যালেনকুর এই ফলকটি আমাদের অতীত সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
অতীত কি ভবিষ্যতের থেকেও বেশি রহস্যময়?
হয়তো এটি নিছকই এক ধর্মীয় শিল্পকর্ম। আবার হয়তো এটি এমন এক যুগের ছায়া, যার প্রযুক্তি বা জ্ঞান আজ হারিয়ে গেছে ইতিহাসের ধুলোর নিচে।
যাই হোক না কেন, প্যালেনকুর ফলকটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—প্রাচীন পৃথিবী ছিল কল্পনার চেয়েও বেশি বিস্ময়কর।
তথ্যসূত্র
Maya Archaeology Archives
National Geographic
INAH – Instituto Nacional de Antropología e Historia (Mexico)