Friday, October 3, 2025
Homeসভ্যতামায়া সভ্যতা: এক বিস্ময়কর প্রাচীন সংস্কৃতি

মায়া সভ্যতা: এক বিস্ময়কর প্রাচীন সংস্কৃতি

মায়া সভ্যতা: এক বিস্ময়কর প্রাচীন সংস্কৃতি

মায়া সভ্যতা (Maya Civilization) হল প্রাচীন মেসোআমেরিকার একটি অন্যতম জটিল, উন্নত এবং দীর্ঘস্থায়ী সভ্যতা, যা বর্তমান দক্ষিণ মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, বেলিজ, হন্ডুরাস ও এল সালভাদরের কিছু অংশজুড়ে বিস্তৃত ছিল।

এই সভ্যতার উত্থান প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সাল নাগাদ শুরু হলেও, এর স্বর্ণযুগ ছিল খ্রিষ্টীয় ২৫০ থেকে ৯০০ সালের মধ্যে। মায়া সভ্যতা বিজ্ঞান, স্থাপত্য, জ্যোতির্বিজ্ঞান, কৃষি ও লিপি ব্যবস্থায় ছিল অত্যন্ত উন্নত এবং অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিক সময়ের তুলনায় আশ্চর্যজনকভাবে অগ্রসর।

উৎপত্তি ও ভৌগোলিক পরিসর

মায়ারা মেসোআমেরিকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে গড়ে ওঠে, যেখানে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন, পর্বত, উপত্যকা ও উপকূলীয় সমভূমি ছিল। তিনটি প্রধান অঞ্চল ছিল এই সভ্যতার মধ্যে—উচ্চভূমি, নিম্নভূমি দক্ষিণ (যেখানে তিকাল ও কপান ছিল), এবং উত্তরাঞ্চল (যেমন ইউকাটান উপদ্বীপ)। এরা গ্রামীন কৃষিভিত্তিক সমাজ গঠন করে এবং পরে শহর-রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থা

মায়া সমাজ ছিল রাজতান্ত্রিক এবং বহু নগররাষ্ট্রভিত্তিক। প্রতিটি শহর ছিল একেকটি স্বাধীন রাজ্য, যার নিজস্ব রাজা ও ধর্মীয় কাঠামো ছিল। রাজারা নিজেদের “ঈশ্বরের প্রতিনিধি” বা আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে দাবি করতেন। সমাজ পাঁচটি স্তরে বিভক্ত ছিল: রাজা ও অভিজাত, পুরোহিত, দক্ষ কারিগর, কৃষক, এবং দাস শ্রেণি।

স্থাপত্য ও নগর পরিকল্পনা

মায়া স্থাপত্য ছিল অত্যন্ত উন্নত ও প্রতীকময়। তারা বিশাল পিরামিড নির্মাণ করত, যার উপরে মন্দির থাকত। তিকাল, পালেনকে, কপান, ও চিচেন ইতজা ছিল গুরুত্বপূর্ণ নগর যেখানে আজও তাদের পিরামিড, প্রাসাদ, বলক্রীড়াক্ষেত্র (ball courts), এবং জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। তারা চুনাপাথর দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করত এবং জ্যামিতিক প্যাটার্ন, ধর্মীয় চিত্র ও হায়ারোগ্লিফিক শিলালিপি ব্যবহারে নিপুণ ছিল।

বিজ্ঞান ও গণিত

মায়া সভ্যতা জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিতে অগ্রণী ছিল। তারা এমন একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিল যা সূর্যচক্র ও চন্দ্রচক্র অনুসরণ করে এবং অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট। মায়ারা ‘শূন্য’ (০) সংখ্যার ধারণা প্রথম দিককার সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে ব্যবহার করেছিল। তাদের গণনা পদ্ধতি ছিল বিশধারী (vigesimal), অর্থাৎ ২০ ভিত্তিক।

জ্যোতির্বিদ্যা ও ক্যালেন্ডার

মায়ারা সূর্য, চাঁদ, শুক্র গ্রহ ও নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করে কৃষিকাজ ও ধর্মীয় আচারের সময় নির্ধারণ করত। তারা দুটি প্রধান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করত:

হাব (Haab’): ৩৬৫ দিনের সৌর ক্যালেন্ডার।

ত্জোলকিন (Tzolk’in): ২৬০ দিনের ধর্মীয় ক্যালেন্ডার।

এছাড়া তারা একটি “লং কাউন্ট” পদ্ধতিও তৈরি করেছিল, যা ইতিহাসকে হাজার বছর পর্যন্ত গণনা করতে সক্ষম।

লিপি ও সাহিত্য

মায়া লিপি ছিল মেসোআমেরিকার সবচেয়ে উন্নত লেখনিপদ্ধতি। তারা হায়ারোগ্লিফিক বা ছবি-লিপি ব্যবহার করত এবং একে বলা হয় মায়া গ্লিফ। এই গ্লিফগুলো ব্যবহার করে তারা রাজ্য ইতিহাস, ধর্মীয় আচার, রাজা-রাজরাদের বংশাবলি ও যুদ্ধে জয়লাভের বিবরণ লিখে রাখত। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাণ্ডুলিপি (যেমন, Dresden Codex, Madrid Codex) এখনো বিদ্যমান।

পোশাক

পোশাক তাদের সামাজিক স্তরের প্রকারভেদ এর ওপরে নির্ভর করত। অভিজাতদের পোশাক ও সাধারণ মায়াদের পরিধেয় বস্ত্র এক ছিল না। যারা ধনী ও অভিজাত মায়া ছিল; তারা সাধারণত জন্তু জানোয়ারের চর্ম ও লোম হতে তৈরি বস্ত্র পরিধান করত।

যা দেখতে যেমন রঙিন হত তেমনই ভারী হত। তারা মহামূল্যবান রত্ন ও সোনা দ্বারা সৃষ্ট গয়না পড়তে পছন্দ করত।সাধারণ মায়ারা নেংটি পড়ে থাকত। গ্রীষ্মকালে খালি গায়ে থাকলেও শীতকালে পুরুষরা ঊর্ধ্বাঙ্গে পঞ্চো ধরনের পোশাক পড়ে থাকত।

যা কম্বল দিয়ে তৈরি করা হত। মেয়েরাও একই পোশাক পরে থাকত।তবে মেয়েরা লম্বা স্কার্ট গোছের পোশাক পড়ত। এদের উভয় লিঙ্গের পোশাকআশাক অনেকাংশে অ্যাজটেক সভ্যতার মতন ছিল।

আরও দুটি বিষয়ে উভয় লিঙ্গের মধ্যে মিল ছিল। আর তা হল উভয়েই বিয়ের পরে গায়ে উল্কি মেরে রাখত নিজেদের বিবাহিত প্রমাণ রাখতে। এবং উভয়েই একই রকমের বিশাল কেশরাজি বহন করে রাখত।

অভিজাত জীবন

একজন মায়া সম্রাট এবং অভিজাতদের জীবন অত্যন্ত সহজ ও বিলাবহুল ছিল। তাদের এমনকি জামাকাপড় ছাড়া কিছু বহনও করতে হত না। তাদের সব ভার বহন করত সাধারণ মায়া অথবা অন্যান্য জাতি হতে আগত ক্রীতদাসরা।

জীবনযাত্রা

একজন মায়া সাধারণ মানুষের জীবন যেমন কষ্টকর তেমনি কঠিন পরিশ্রমের ছিল। মজদুররা সাধারণত কৃষাণ হিসাবে জীবিকা নির্বাহ করত। তারা সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত কাজই শুধু করে যেত।

তাদের স্ত্রীরা সাধারণত রান্নাবান্না এবং সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত থাকত। ছেলেমেয়ে প্রতিপালন করাটাও তাদের অন্যতম কাজ ছিল। চাষিরা সারাদিন চাষাবাদ করার ফাঁকে দিনে একবারই মাত্র বাড়িতে ফিরে আসত; স্নান করে খেয়ে নেওয়ার জন্য।

স্নান করাটা ছিল তাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। স্নান না করলে তারা খুবই অসুবিধা বোধ করত। অবশ্য স্নান করাটা শুধু চাষিরা নয় সব মায়ারাই করত। এটা তাদের সংস্কৃতির অঙ্গ বলে মনে করা হত।

ধর্ম ও আচার

মায়া ধর্ম ছিল বহু-ঈশ্বরবাদী (polytheistic)। তারা প্রকৃতি, সূর্য, চাঁদ, বৃষ্টি ও মাটি-সংক্রান্ত দেবতাদের পূজা করত। কিছু জনপ্রিয় দেবতা হল:

ইতজামনা – প্রধান ঈশ্বর, জ্ঞান ও সৃষ্টির দেবতা

চাক – বৃষ্টির দেবতা

কুকুলকান – পালকধারী সর্পদেবতা (মেক্সিকোর কোয়েটজালকোয়াটলের সমতুল্য)

তারা রক্তপূজা, পশুবলি এবং মাঝে মাঝে মানুষের বলিও দিত। বলিদানকে তারা ঈশ্বরদের প্রতি শ্রদ্ধা ও জীবনের পুনর্জন্মের অংশ মনে করত।

কৃষি জীবনযাপন ও খাদ্য

মায়ারা মূলত কৃষিপ্রধান জনগোষ্ঠী ছিল। তারা মিলপা পদ্ধতিতে (জমি জ্বালিয়ে ফেলে নতুন ফসল উৎপাদন) চাষ করত। মায়াদের কাছে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ আহার ছিল ভুট্টা বা মেইজে। তারা এই ভুট্টা দিয়ে সব রকমের খাদ্য তৈরি করে খেত।

যেমন টর্টিলা, ডালিয়া এবং পনীর জাতীয় খাদ্য। এমনকি ভুট্টা পচিয়ে মদ তৈরি করে খেত। এছাড়া এরা আহার হিসাবে যেসব খাদ্যশস্য ও আমিষ গ্রহণ করত তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শিম, সব রকমের শুঁটি, স্কোয়াশ, লঙ্কা। এছাড়া হরিণ, হাঁস, বক, টার্কি এবং মাছ।

মাছ তারা বেশি করে খেত বিশেষতঃ সমুদ্রের মাছ। তেলাপিয়া ছিল তাদের প্রিয় খাদ্য। মায়াদের কাছ থেকেই বিশ্ব বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য উপহার পেয়েছে। যেমন, চকোলেট, টোম্যাটো, রাঙ্গালু, কালো শিম ও পেঁপে। চকোলেট তৈরি হত কাকাও গাছ থেকে।

তারা মনে করত চকোলেট হল ঈশ্বরের অবদান। এবং চকোলেট যে গাছ থেকে উৎপন্ন হত; সেই কাকাওয়ের বীজকে তারা মুদ্রার বিকল্প রূপে ব্যবহার করত।

যেমন আমরা এককালে সামুদ্রিক কড়িকে মুদ্রার বিকল্প রূপে ব্যবহার করতাম ওরাও সেইরকমই কাকাওয়ের বীজকে মুদ্রার বিকল্প রূপে ব্যবহার করত। তারা জল সংরক্ষণের জন্য জলাধার ও কূপ খনন করত, বিশেষ করে ইউকাটান অঞ্চলের যেখানে প্রাকৃতিক নদী ছিল না।

বাড়িঘর

অভিজাত ও সম্রাট এর আত্মীয় বর্গের দল শহরের মধ্যে নিখাদ গ্রানাইট পাথরের বাড়িতে বসবাস করতেন। তাতে বাগান বাড়ি ও বিরাট স্নানাগার থাকত। আর মায়া জনসাধারণ গ্রামে কৃষিক্ষেতের পাশে কুঁড়েঘর বানিয়ে থাকত।

এইসব কুঁড়েঘর তৈরি হত এঁটেল মাটি দিয়ে। এসব বাসস্থান অত্যন্ত নিম্নমানের ছিল। এইসব বাড়িতে ঘরের সংখ্যা ছিল মাত্র দুটি। এক, প্রার্থনা ঘর এবং রান্না ঘর এবং দুই শয়নকক্ষ এবং শৌচাগার।

এইসব বাড়ির ছাদ পাম গাছের পাতা দিয়ে ছাওয়া থাকত। তবে কিছু কিছু মায়া সাধারণ মানুষ পাথরের বাড়িতে বসবাসও করত; তবে তাদের সংখ্যা ছিল অত্যল্প। তবে সব মায়ারাই মাটি থেকে বেশ খানিকটা উঁচুতে পাথর দিয়ে মাচা বানিয়ে তার উপরে বাড়ি বানাত।

এতে বন্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেত। কেননা অধিকাংশ মায়া নগররাষ্ট্র এবং সংলগ্ন অঞ্চল ছিল সমুদ্রতীরে। সেই জন্যই এমন সতর্কতা পালন করত। বিশেষতঃ ইউকাটায়েন উপদ্বীপ অঞ্চলে সর্বদাই সুনামি বা সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস প্রায়ই আসত। সেই জন্যই এমন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল মায়া অঞ্চলে।

বিনোদন

যদিও মায়ারা অত্যন্ত কঠিন জীবনযাপন করত, তবুও তারা বিনোদন এর ব্যবস্থা করত; বিশেষতঃ ছুটির দিনে কিংবা ধর্মীয় দিবসের দিনগুলিতে। তারা নাচতে, গাইতে এবং খেলতে খুবই উৎসাহ পেত। অনেকেরই ধারণা তারা ছিল ভলিবল এর জনক।

পতনের কারণ

মায়া সভ্যতার ধসের কারণ সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট নয়। তবে ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় বেশ কিছু কারণ উঠে এসেছে:

আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধ

অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও কৃষিজমির উপর চাপ

দীর্ঘমেয়াদি খরা ও জলবায়ু পরিবর্তন

বাণিজ্য পতন ও অর্থনৈতিক সঙ্কট

৯০০ খ্রিস্টাব্দের পরে দক্ষিণের অনেক শহর পরিত্যক্ত হয়ে যায়। যদিও উত্তরাঞ্চলে কিছু শহর যেমন চিচেন ইতজা, ওক্সমাল প্রভৃতি আরও কিছু শতক টিকে ছিল।

ঔপনিবেশিক যুগ

তাদের এই অঞ্চলে প্রথম অভিযানের অল্পসময় পরে যে মায়ারা স্পেনীয় মুকুটের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন ছিল তাদেরকে ক্রীতদাস করার প্রচেষ্টা আরম্ভ হয় এবং মায়া ইউকাটান উপদ্বীপ এবং গুয়াতেমালার পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যে তাদের ঔপনিবেশিক উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করে।

এই অভিযানকে, কখনও কখনও, “ইউকাটানের স্পেনীয় বিজয়” বলে আখ্যায়িত করা হত, যা সূত্রপাত থেকে দখলদারদের জন্য একটি সুদীর্ঘ এবং বিপজ্জনক অনুশীলন প্রমাণিত হয়। সমস্ত মায়া ভূমির উপর স্পেনীয় স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করতে সেখান কার শত শত হাজার আদিবাসি এবং প্রায় ১৭০ বছর সময় লেগেছে।

🇪🇸 স্প্যানিশ আগমন ও ঔপনিবেশিক দমন

১৬শ শতকে স্প্যানিশ বিজেতারা (Conquistadors) যখন মেক্সিকো দখল করে, তখন কিছু মায়া রাজ্য এখনও টিকে ছিল। ১৬৯৭ সালে শেষ মায়া শহর নোহপেটেন স্প্যানিশদের দ্বারা দখল হয়। এরপর ধ্বংস করা হয় মায়া পাণ্ডুলিপি ও মন্দির—ফলে অনেক ঐতিহাসিক তথ্য হারিয়ে যায়।

আধুনিক মায়া জনগণ ও ঐতিহ্য

আজও মিলিয়নেরও বেশি মায়া জনগণ মধ্য আমেরিকায় বসবাস করেন। তারা এখনও তাদের ভাষা, পোশাক, ধর্মীয় আচার এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করে চলেছেন। অনেক জায়গায় পুরাতন মায়া ভাষার রূপান্তরিত রূপ কথা ও লিপি আকারে সংরক্ষিত হয়েছে।

মায়া সভ্যতা ছিল একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ, জ্ঞানভিত্তিক ও অত্যন্ত সৃজনশীল সংস্কৃতি যা প্রাচীন আমেরিকান ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যদিও এই সভ্যতার বেশিরভাগ অংশই ধ্বংস হয়ে গেছে, তবে তাদের স্থাপত্য, ক্যালেন্ডার, ভাষা, ও ধর্মীয় দর্শনের ছাপ আজও বিশ্বজুড়ে বিস্ময় সৃষ্টি করে।

তথ্যসূত্র:

Coe, Michael D. – The Maya

Sharer, Robert J. – The Ancient Maya

Smithsonian Institution – National Museum of the American Indian

Encyclopaedia Britannica – Maya Civilization

UNESCO World Heritage – Maya Sites

Itihasar Golpo
Itihasar Golpohttps://itihasargolpo.com
Step into the past with our unforgettable historical journey. Discover the secrets of history on our captivating journey.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments