সোনারং জোড়া মঠ মুন্সিগঞ্জ
সোনারং জোড়া মঠ বাংলাদেশের অষ্টাদশ শতাব্দীর এই প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। কথিত ইতিহাসে জোড়া মঠ হিসাবে পরিচিত লাভ করলেও মুলত এটি জোড়া মন্দির। মন্দিরের একটি প্রস্তর লিপি থেকে জানা যায় এলাকার রূপচন্দ্র নামে হিন্দু লোক বড় কালীমন্দিরটি ১৮৪৩ সালে ও ছোট মন্দিরটি ১৮৮৬ সালে নির্মাণ করেন। ছোট মন্দিরটি মূলত শিবমন্দির। বড় মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ১৫ মিটার। বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপত্য ঐতিহ্যের ভাণ্ডারে সোনারং জোড়া মন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, বরং ইতিহাস, শিল্প, নান্দনিকতা এবং স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মন্দিরটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনের কেন্দ্র হিসেবে টিকে আছে। স্থাপত্যের দিক থেকে এটি বাংলার আটচালা মন্দিরশৈলীর এক চমৎকার উদাহরণ, আবার সামাজিক ইতিহাসের দিক থেকেও এটি তৎকালীন সমাজের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতির প্রতিচ্ছবি।
সোনারং জোড়া মন্দিরের অবস্থান
সোনারং জোড়া মন্দির বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে অবস্থিত। এটি অষ্টাদশ শতাব্দীর একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং মূলত দুটি মন্দির নিয়ে গঠিত একটি বড় কালী মন্দির ও একটি ছোট শিব মন্দির। দুটি মন্দির নিয়ে গঠিত, যা জোড়া মন্দির নামে পরিচিত। বড় কালী মন্দিরটি ১৮৪৩ সালে এবং ছোট শিব মন্দিরটি ১৮৮৬ সালে স্থানীয় রূপচন্দ্র নামে এক ব্যক্তি নির্মাণ করেন। এটি মেঘনা নদীর তীরবর্তী একটি এলাকা, যা একসময় নদীপথে বাণিজ্যের জন্য সুপরিচিত ছিল। নদীঘেঁষা গ্রামীণ জনপদে মন্দিরের অবস্থান ধর্মীয় জীবনের পাশাপাশি সামাজিক কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবেও ভূমিকা রেখেছে।
সোনারং জোড়া মন্দিরের ঐতিহাসিক পটভূমি
স্থানীয় হিন্দু বণিক রূপচন্দ্র তাঁর বাবা-মায়ের স্মৃতি রক্ষার্থে এই মন্দির দুটি নির্মাণ করেন বলে একটি প্রস্তরলিপি থেকে জানা যায়। এটি অষ্টাদশ শতাব্দীর স্থাপত্যশৈলীর এক অপূর্ব নিদর্শন। সোনারং জোড়া মন্দিরটি ১৮শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে (প্রায় ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে) জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত হয় বলে ধারণা করা হয়। স্থানীয় ইতিহাসবিদদের মতে, তৎকালীন জমিদার রাজা রূপচন্দ্রচন্দ্র রায় ও তার উত্তরসূরিরা মন্দিরটির নির্মাণকাজ শুরু করেন। জমিদার পরিবারগুলো তৎকালীন সময়ে সমাজে প্রভাবশালী ছিল এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির অন্যতম উপায় ছিল।
সোনারং জোড়া মন্দিরের নামকরণের কারণ
সোনারং জোড়া মন্দিরের নামকরণ মূলত একই জায়গায় পাশাপাশি অবস্থিত দুটি মন্দিরের কারণে হয়েছে। এই দুটি মন্দির, একটি বড় কালীমন্দির ও একটি ছোট মন্দির, এলাকার রূপচন্দ্র নামক এক হিন্দু ব্যক্তি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল, যার ফলস্বরূপ এটিকে “জোড়া মন্দির” বা প্রচলিত নামে “জোড়া মঠ” বলা হয়। এই মন্দিরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর দুটি স্বতন্ত্র স্থাপনা একই সাথে পাশাপাশি অবস্থিত। একটি বড় কালীমন্দির এবং তার পাশে একটি ছোট মন্দির, যা এই স্থানটির “জোড়া” পরিচয় তৈরি করেছে। যদিও এটি মূলত মন্দির, লোকমুখে এটিকে “জোড়া মঠ” হিসেবেও পরিচিতি দেওয়া হয়েছে, যা এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে। এই কারণে, সোনারং জোড়া মন্দির বা মঠ নামে পরিচিতি লাভ করেছে, যা একটি ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্যিক নিদর্শন। দুটি মন্দিরই স্থাপত্যে প্রায় অভিন্ন, যা যুগল আকৃতির কারণে “জোড়া” শব্দের ব্যবহার হয়েছে। “সোনারং” শব্দটি এসেছে স্থানীয় গ্রামটির নাম থেকে।
সোনারং জোড়া মন্দির স্থাপত্য
কাঠামো ও বিন্যাস
সোনারং জোড়া মন্দির দুটি পাশাপাশি অবস্থিত অষ্টভুজাকৃতির মন্দির, যেখানে একটি বড় কালী মন্দির ও একটি ছোট শিব মন্দির রয়েছে। বড় মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ১৫ মিটার, এবং একটি প্রস্তরলিপি অনুসারে স্থানীয় বণিক রূপচন্দ্র ১৮৪৩ সালে বড় কালী মন্দির ও ১৮৮৬ সালে ছোট শিব মন্দিরটি নির্মাণ করেন। দুটি মন্দিরের কাঠামোতে কিছু পার্থক্য রয়েছে; বড় মন্দিরটি তুলনামূলকভাবে উঁচু এবং এর বারান্দাটি ছোট মন্দিরের চেয়ে বড়। উভয় মন্দিরের দেয়াল পুরু এবং চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি, এবং এর সামনে একটি বড় পুকুর রয়েছে যা বড় মন্দিরটি নির্মাণের সময় খনন করা হয়েছিল। বড় মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ১৫ মিটার, এবং এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ২১ ফুট। ছোট মন্দিরটি বড় মন্দিরের চেয়ে কিছুটা ছোট। চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি এই মন্দিরের দেয়াল বেশ পুরু। দুটি মন্দিরের মূল উপাসনালয় কক্ষের সঙ্গে বারান্দা রয়েছে; বড় মন্দিরটির বারান্দা ১.৯৪ মিটার এবং ছোটটির বারান্দা ১.৫ মিটার চওড়া। মূল মন্দিরের ছাদ নিচু গোলাকার গম্বুজ আকৃতির।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
সোনারং জোড়া মন্দিরের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য হলো এটি অষ্টাদশ শতাব্দীর অষ্টভুজাকৃতির দুটি মন্দির। একটি বড় কালী মন্দির ও একটি অপেক্ষাকৃত ছোট শিব মন্দির, দুটিই চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি এবং এদের পুরু দেয়াল রয়েছে। মন্দিরের পাশে একটি বারান্দা এবং সামনে একটি পুকুর আছে।
আটচালা ধাঁচ: মন্দির দুটি আটচালা ধাঁচে নির্মিত, যা বাংলার হিন্দু মন্দির স্থাপত্যে বিশেষভাবে প্রচলিত।
শীর্ষচূড়া: মন্দিরগুলোর চূড়া তুলনামূলকভাবে উচ্চ এবং শঙ্কু আকৃতির।
সজ্জা: দেয়ালে টেরাকোটা ফলক এবং ফুল-লতাপাতার নকশা রয়েছে। বিশেষ করে রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন কাহিনি টেরাকোটার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রবেশদ্বার: প্রতিটি মন্দিরের একটি করে প্রধান প্রবেশদ্বার আছে, যা খিলানযুক্ত।
সোনারং জোড়া মন্দিরের শিল্প ও নকশা
সোনারং জোড়া মন্দিরের শিল্পকলা ও নকশার মধ্যে রয়েছে চুন-সুরকির পুরু দেয়াল, নিচু গোলাকার গম্বুজ, এবং বাইরের দেওয়ালে ফোকর বা খিলান নকশা। বিশেষ করে, পূর্বদিকের মন্দিরের শিখরের বহিঃগাত্রে আস্তরকৃত খিলান নকশার ব্যবহার দেখা যায়। বড় মন্দিরটির চূড়ায় একটি ত্রিশূল রয়েছে। মন্দিরের ভেতরের বারান্দা, প্রস্তরলিপি এবং একসময় থাকা তামার নকশা ও পাথরের মূর্তিগুলোও এর শিল্প ও কারুকাজের অংশ ছিল। টেরাকোটার ফলকগুলোতে সমকালীন জীবনের প্রতিচ্ছবি যেমন—যোদ্ধা, নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ, পশুপাখি, ফুল-লতাপাতা ইত্যাদি দেখা যায়। এগুলো কেবল ধর্মীয় দিক নয়, বরং তৎকালীন সমাজ-সংস্কৃতির প্রতিফলন বহন করে।
সোনারং জোড়া মন্দিরের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
সোনারং জোড়া মন্দিরটি অষ্টাদশ শতাব্দীর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং এর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য অপরিসীম। এটি মূলত একটি বড় কালী মন্দির ও একটি ছোট শিব মন্দির, যা স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ী রূপচন্দ্র ১৮৪৩ ও ১৮৮৬ সালে নির্মাণ করেন। মন্দিরটি বিক্রমপুরের সমৃদ্ধশালী অতীত এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের আধিপত্যের সাক্ষ্য বহন করে। বর্তমানে এটি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত একটি স্থান এবং এর স্থাপত্যশৈলী ও স্থানীয় ঐতিহ্য একে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে।
মন্দির দুটি বড় কালী মন্দির এবং ছোট শিব মন্দির নিয়ে গঠিত, যা হিন্দু ধর্মের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেবদেবীর প্রতি উৎসর্গীকৃত। এটি একসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কেন্দ্র ছিল এবং এলাকার ধর্মীয় জীবনে বিশেষ ভূমিকা রাখত। মন্দিরটি সোনারং গ্রাম এবং তৎকালীন বিক্রমপুরের সমৃদ্ধশালী ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে পরিচিত। একসময় মন্দিরের ভেতরে ও বাইরের অংশে চমৎকার কারুকার্য ছিল, যা তৎকালীন শিল্পী ও কারিগরদের দক্ষতার পরিচয় দেয়। সোনারং জোড়া মন্দির দীর্ঘকাল ধরে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দুর্গাপূজা, কালীপূজা, দোলযাত্রা, রথযাত্রা ইত্যাদি উৎসব এখানে বড় আকারে পালিত হয়।
সোনারং জোড়া মন্দিরের সংরক্ষণ ও বর্তমান অবস্থা
সোনারং জোড়া মন্দিরটি মূলত একটি ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যা মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত এবং এটি দীর্ঘদিনের অবহেলা ও অযত্নের কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে, যদিও এর মূল স্থাপত্যশৈলী এখনো মুগ্ধ করার মতো। মূল স্থাপত্যের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রীও চুরি হয়ে গেছে। এখন দ্রুত মেরামত ও তদারকির ব্যবস্থা না হলে এটি ইতিহাস থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে বলে স্থানীয়রা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা ও অযত্নের কারণে মন্দিরটি ধ্বংসের মুখে রয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে মন্দির থেকে মূল্যবান সামগ্রী চুরি হয়ে গেছে এবং এর স্থাপত্যের কারুকার্য নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে মন্দিরটির কিছু অংশ ক্ষয়ে গেছে। ইটের গাঁথুনি দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং টেরাকোটার ফলক অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে। পুরাতত্ত্ব অধিদপ্তর ইতিমধ্যেই সোনারং জোড়া মন্দিরকে প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিছুসংখ্যক সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়েছে, তবে এখনো যথেষ্ট যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। স্থানীয় মানুষ এবং পূজারী সম্প্রদায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণে ভূমিকা রাখছে। পূজার সময় তারা স্বেচ্ছাশ্রমে মন্দির পরিষ্কার করে এবং অস্থায়ী মেরামতের কাজ সম্পন্ন করে।
সোনারং জোড়া মন্দিরের তুলনামূলক বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের অন্যান্য বিখ্যাত জোড়া মন্দির যেমন—পুঠিয়ার জোড়া শিব মন্দির, রাজশাহীর পাড়ার জোড়া মন্দির ইত্যাদির সঙ্গে তুলনা করলে সোনারং জোড়া মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী অনেকটা মিল পাওয়া যায়। তবে এখানে টেরাকোটা ফলকের ব্যবহার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সোনারং জোড়া মন্দিরের পর্যটন সম্ভাবনা
সোনারং জোড়া মন্দিরের পর্যটন সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল, কারণ এটি অষ্টাদশ শতাব্দীর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং স্থাপত্যশৈলীর এক অপূর্ব উদাহরণ, যা ইতিহাস ও স্থাপত্যপ্রেমী পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে। এই মন্দিরটিকে ঘিরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রচার-প্রচারণা, এবং স্থানীয় পর্যটন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করা হলে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। সোনারং জোড়া মন্দির পর্যটন শিল্পের জন্য এক সম্ভাবনাময় স্থান। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, শিল্পকলার সৌন্দর্য ও ধর্মীয় আবহ একে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সঠিক প্রচার, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংরক্ষণ কার্যক্রম বাড়ানো গেলে এটি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্যও একটি দর্শনীয় স্থান হতে পারে।
সোনারং জোড়া মন্দির আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর গড়ে ওঠা, বিকাশ ও টিকে থাকা কেবল একটি স্থাপত্য নিদর্শনের গল্প নয়, বরং বাংলার জমিদার প্রথা, ধর্মীয় ভক্তি, সমাজজীবন ও শিল্পকলার অগ্রগতির প্রতিচ্ছবি। যুগে যুগে এই মন্দির স্থানীয় জনগণের বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান এবং সামাজিক মেলবন্ধনের কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।
আজকের দিনে মন্দিরটির গুরুত্ব কেবল ধর্মীয় সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ নয়; বরং এটি আমাদের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যকলার জীবন্ত সাক্ষ্য। মন্দিরে ব্যবহৃত টেরাকোটা শিল্পকর্ম থেকে আমরা জানতে পারি বাংলার মানুষের জীবনধারা, বিশ্বাস, এমনকি সমকালীন সমাজের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা সম্পর্কেও। ফলে এটি গবেষণা, শিক্ষাব্যবস্থা এবং ঐতিহ্যচর্চার জন্য এক অমূল্য সম্পদ।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, সোনারং জোড়া মন্দির বর্তমানে যথেষ্ট অবহেলার শিকার। প্রাকৃতিক ক্ষয়, অব্যবস্থাপনা এবং প্রয়োজনীয় সংরক্ষণ কার্যক্রমের অভাবে মন্দিরটির স্থায়িত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। যদি এখনই যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে অদূর ভবিষ্যতে আমরা এই মহামূল্যবান ঐতিহ্য হারাতে পারি।
অতএব বলা যায়, সোনারং জোড়া মন্দির অতীতের গৌরবময় স্থাপত্য ঐতিহ্যের প্রতীক। এটি শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় কেন্দ্র নয়, বরং পুরো বাংলাদেশের ঐতিহ্যের অংশ। আগামী প্রজন্মের কাছে এই মন্দিরের গল্প, এর শিল্পকর্ম এবং ইতিহাস পৌঁছে দেওয়াই আমাদের দায়িত্ব। যথাযথ সংরক্ষণ, সচেতনতা এবং উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নিলে সোনারং জোড়া মন্দির কেবল একটি পুরনো নিদর্শন হয়ে থাকবে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঐতিহ্যের বাতিঘর হয়ে উঠবে।
তথ্যসূত্র
বাংলাদেশ পুরাতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।
সেলিনা হোসেন, বাংলার মন্দির স্থাপত্য, ঢাকা: বাংলা একাডেমি।
স্থানীয় ইতিহাসবিদদের মৌখিক সাক্ষাৎকার ও নথি।
ড. এনামুল হক, বাংলাদেশের শিল্প ও স্থাপত্য ইতিহাস, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড।