Friday, October 3, 2025
Homeইতিহাসকুসুম্বা মসজিদের ইতিহাস

কুসুম্বা মসজিদের ইতিহাস

কুসুম্বা মসজিদের ইতিহাস

বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যকলার ভাণ্ডারে অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। এর মধ্যে মধ্যযুগীয় মুসলিম স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শন হলো কুসুম্বা মসজিদ। রাজশাহী জেলার নওগাঁ অঞ্চলে অবস্থিত এই মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং এটি বাংলার সুলতানি আমলের কারুকার্য ও স্থাপত্য বৈচিত্র্যের এক জীবন্ত দলিল। স্থানীয়ভাবে এটি “কালো পাথরের মসজিদ” নামেও পরিচিত।

মসজিদটি নির্মিত হয় ১৫৫৮ -১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দে আফগান শাসক সুর বংশের আমলে। এটি একটি ছোট কিন্তু শিল্পসমৃদ্ধ স্থাপত্য নিদর্শন, যেখানে ইট ও পাথরের যুগল সমন্বয় দেখা যায়। মসজিদটি বর্তমান সময়েও দাঁড়িয়ে আছে, যদিও ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক ক্ষয়ক্ষতির কারণে আংশিক ভগ্নাবশেষে পরিণত হয়েছে। তবুও এর দেয়াল, কারুকাজ ও অলঙ্করণ আজও ইতিহাসপ্রেমীদের আকর্ষণ করে।

কুসুম্বা মসজিদ কোথায় অবস্থিত

কুসুম্বা মসজিদ বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কুসুম্বা গ্রামে অবস্থিত। ছোট্ট এই গ্রামটি নওগাঁ শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। মসজিদটি পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের কাছাকাছি হওয়ায় প্রত্নতাত্ত্বিক ভ্রমণপথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। গ্রামীণ পরিবেশে অবস্থিত হওয়ায় মসজিদটির চারপাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিরাজ করছে। সবুজ মাঠ, গাছপালা আর নীরবতা মসজিদের পবিত্রতা ও প্রাচীনতার অনুভূতিকে বাড়িয়ে তোলে। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন, যা ১৫৫৮-১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটি একটি দিঘির পাশে অবস্থিত এবং এর চারপাশে প্রাচীর ঘেরা আঙ্গিনা রয়েছে। মসজিদটি কালো ও ধূসর রঙের পাথর এবং ইঁট দিয়ে নির্মিত এবং এর নির্মাণশৈলী সুলতানি আমলের ঐতিহ্য বহন করে।

কুসুম্বা মসজিদ কোন শতকে নির্মিত ও ঐতিহাসিক পটভূমি

কুসুম্বা মসজিদ সুলতানি শাসনামলের স্থাপত্যের এক দারুণ নিদর্শন, যা ১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দে (হিজরি ৯৬৬) শূর রাজবংশের শেষ শাসক গিয়াস উদ্দিন বাহাদুর শাহের শাসনামলে জনৈক সুলায়মান নামক এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও দানশীল ব্যক্তি নির্মাণ করেন। নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কুসুম্বা গ্রামে অবস্থিত এই মসজিদটি কালো পাথরের জন্য বিখ্যাত এবং বাংলাদেশের জাতীয় ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম।এই সময় স্থানীয় শাসক সুলায়মান কাররানি ও তাঁর উত্তরসূরীরা বিভিন্ন স্থানে স্থাপত্য নির্মাণ করেন। ১৫৫৯ সালে এক স্থানীয় জাগীরদার বা প্রশাসনিক কর্মকর্তা মসজিদটি নির্মাণ করেন। নির্মাণে কালো ব্যাসাল্ট পাথর ও ইট ব্যবহার করা হয়। কালো পাথরের ব্যবহারের কারণে এটি বাংলার স্থাপত্যে বিশেষ স্থান লাভ করে।

কুসুম্বা মসজিদ স্থাপত্য

কুসুম্বা মসজিদের স্থাপত্যশৈলীতে কালো পাথর ব্যবহার করা হয়েছে, যা এই মসজিদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং এটি মুসলিম স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন। মসজিদটি কালো পাথরে নির্মিত এবং এর দেয়াল, মিনার ও গম্বুজে নকশা খোদাই করা রয়েছে। ইটের গাঁথুনি, সামান্য বাঁকানো কার্নিশ, সংলগ্ন আটকোণা বুরুজ, এবং জ্যামিতিক নকশার আদলে পোড়ামাটির কারুকার্য বা টেরাকোটা স্থাপত্যে বাংলা রীতির প্রভাব নির্দেশ করে।

স্থাপত্যের মূল বৈশিষ্ট্য:

কালো পাথরের ব্যবহার: মসজিদটি মূলত কালো পাথর দিয়ে নির্মিত, যা একে এক বিশেষ আকর্ষণীয় রূপ দিয়েছে।

নকশা ও কারুকার্য: দেয়াল, মিনার এবং গম্বুজগুলোতে সুন্দর নকশা ও কারুকার্য খোদাই করা আছে। মিহরাবে লতাপাতা, ফুল এবং জ্যামিতিক নকশা দেখা যায়।

আটকোণা বুরুজ: মসজিদের কোণগুলোতে আটকোণা বুরুজ রয়েছে।

বাংলা স্থাপত্যের প্রভাব: ইটের গাঁথুনি, বাঁকানো কার্নিশ ও সংলগ্ন বুরুজগুলোতে বাংলা স্থাপত্যরীতির প্রভাব স্পষ্ট।

টেরাকোটা ও লতাপাতার নকশা: দেয়ালজুড়ে টেরাকোটার কাজ এবং লতাপাতার নকশা এই মসজিদের অন্যতম বিশেষত্ব।

স্থাপত্যের উৎকর্ষতা: ছোট আকারের হওয়া সত্ত্বেও, এর স্থাপত্যশৈলীর উৎকর্ষতার কারণে কুসুম্বা মসজিদকে প্রাক-মুঘল স্থাপত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদ

আকার ও কাঠামো

কুসুম্বা মসজিদের কাঠামো কালো পাথরে তৈরি এবং এর উত্তর-দক্ষিণে দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট ও প্রস্থ ৩৫ ফুট, যেখানে চার দেয়াল প্রায় ৬ ফুট পুরু। এর ছাদে দুটি সারিতে মোট ছয়টি গোলাকার গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের সামনের অংশে তিনটি দরজা এবং এর গায়ে রয়েছে উন্নত মানের লতাপাতার নকশা ও কারুকার্য। এর চারপাশে উঁচু দেয়াল রয়েছে। পশ্চিম দেয়ালটি পুরু ও শক্তিশালী, যাতে মিহরাব স্থাপন করা হয়েছে।

গম্বুজ ও ছাদ

কুসুম্বা মসজিদের ছাদে দুটি সারিতে সাজানো মোট ছয়টি গম্বুজ রয়েছে, যেখানে প্রথম সারির গম্বুজগুলো অপেক্ষাকৃত বড় এবং দ্বিতীয় সারির গম্বুজগুলো আকারে ছোট। ছাদটি আয়তাকার নকশায় নির্মিত।

গম্বুজের বিবরণ: মসজিদটির ছাদে দুটি সারিতে মোট ছয়টি গম্বুজ রয়েছে। প্রথম সারির গম্বুজগুলি আকারে কিছুটা বড় হয়। দ্বিতীয় সারির গম্বুজগুলো প্রথম সারির তুলনায় আকারে কিছুটা ছোট।

ছাদের বিবরণ: মসজিদের ছাদটি একটি আয়তাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত। মসজিদের চারদিকে বক্র ছাদ কিনারা (curved cornice) দেখা যায়। মসজিদটি সম্পূর্ণ প্রস্তর-নির্মিত, তবে গম্বুজ ও খিলানগুলি ইষ্টক-নির্মিত।

দরজা ও জানালা

কুসুম্বা মসজিদের সামনের দিকে তিনটি বড় দরজা রয়েছে এবং এর দেয়াল ইটের তৈরি হলেও বাইরের ও ভেতরের অংশ কালো পাথরের আস্তরণে ঢাকা। মসজিদের সামনে থাকা এই দরজার উপরিভাগে কালো পাথরের অলংকরণ দেখা যায়। এই তিনটি দরজার পাশাপাশি, মসজিদের অন্যান্য অংশেও পাথরের খোদাই করা নকশা দেখা যায়, যার মধ্যে জ্যামিতিক ও লতাপাতার নকশা উল্লেখযোগ্য।

দরজা: মসজিদটির সামনের দিকে একটি কেন্দ্রীয় দরজা ও তার দুই পাশে আরও দুটি দরজা রয়েছে, মোট তিনটি দরজা।

পাথরের কাজ: দরজার ওপর এবং মসজিদের ভেতরের ও বাইরের দেয়ালে কালো পাথরের খোদাই করা অলংকরণ দেখা যায়।

নকশা: দরজার গায়ে জ্যামিতিক নকশা, লতাপাতা এবং ঝুলন্ত শিকলের সুন্দর কারুকাজ রয়েছে।

জানালা: যদিও উল্লেখ করা হয়নি, তবে এই ধরনের স্থাপত্যে সাধারণত জ্যামিতিক নকশার খোদাই করা জানালার ব্যবহার দেখা যায়। মসজিদের মূল গাঁথুনি ইটের হলেও, এর সম্পূর্ণ দেয়াল ও খিলান পাথরের আস্তরণে ঢাকা।

মিহরাব

কুসুম্বা মসজিদের মিহরাবগুলি পাথরের খোদাই করা নকশায় সমৃদ্ধ এবং এটি মসজিদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এই মসজিদে মোট তিনটি মিহরাব রয়েছে: একটি কেন্দ্রীয় মিহরাব এবং পাশে আরও দুটি মিহরাব, যার মধ্যে একটি উঁচু বেদীর উপর স্থাপিত। এই মিহরাবগুলো দক্ষ শিল্পীর হাতে খোদাই করা, যা মসজিদটির স্থাপত্যিক সৌন্দর্যের এক দারুণ উদাহরণ।

কারুকাজ ও অলঙ্করণ

কুসুম্বা মসজিদের কারুকাজ ও অলঙ্করণ কালো পাথরের খোদাইকৃত অলংকরণ ও পোড়ামাটির টালির সুদৃশ্য কারুকাজের জন্য বিখ্যাত। মসজিদের বাইরের ও ভেতরের দেয়ালে, বিশেষ করে মিহরাবগুলোতে জ্যামিতিক নকশা, ফুল, লতাপাতা এবং ঝুলন্ত শিকলের মতো মনোরম শিল্পকর্ম দেখা যায়

ব্যবহৃত উপকরণ

কুসুম্বা মসজিদে ব্যবহৃত প্রধান উপকরণগুলো হলো কালো বেলেপাথর, পোড়া মাটির ইঁট এবং মাটির টালি। এই কালো বেলেপাথরের ব্যাপক ব্যবহারের কারণেই মসজিদটি “কালো পাথরের মসজিদ” নামে পরিচিতি লাভ করেছে। কুসুম্বা মসজিদে প্রধানত দুটি উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে:

কালো ব্যাসাল্ট পাথর – দেয়াল, মিহরাব ও অলঙ্করণে ব্যবহৃত হয়েছে।

ইট – গম্বুজ, দেয়ালের ভেতর অংশ এবং কাঠামোগত কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।

পাথরের এই ব্যবহার বাংলার অন্য কোনো মসজিদে সচরাচর দেখা যায় না।

ধর্মীয় ও সামাজিক ভূমিকা

কুসুম্বা মসজিদের ধর্মীয় ভূমিকা হলো এটি মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাসনালয়, যেখানে তারা সম্মিলিতভাবে প্রার্থনা করেন। এর সামাজিক ভূমিকার মধ্যে রয়েছে এটি একটি জাতীয় ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে মুসলিম স্থাপত্যের প্রতীক এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এর কাজির মঞ্চ একসময় সামাজিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এবং এটি তৎকালীন মুসলিম সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করত। কুসুম্বা মসজিদ শুধু একটি নামাজের স্থান ছিল না; এটি ছিল গ্রামীণ সমাজে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এখানে মানুষ শুধু প্রার্থনার জন্য নয়, নানা সামাজিক আলোচনা ও শিক্ষার জন্যও একত্র হতো। মসজিদের অস্তিত্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্য ও শক্তির প্রতীক হিসেবে কাজ করেছে।

সংরক্ষণ কার্যক্রম

কুসুম্বা মসজিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষণ কার্যক্রম হল বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি গম্বুজ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরই সংস্কার করেছে। মসজিদটি বাংলার সুলতানি আমলের স্থাপত্য ও সংস্কৃতির এক অমূল্য নিদর্শন হওয়ায়, এর ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়মিতভাবে এর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। বাংলাদেশ সরকার ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটির সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। মসজিদের চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ভগ্নাংশ মেরামত, ভেতরে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ইত্যাদি কাজ করা হয়েছে। আজ এটি একটি সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।

শিল্প ও স্থাপত্যে গুরুত্ব

কুসুম্বা মসজিদ বাংলার স্থাপত্য ইতিহাসে একটি বিশেষ ধারা উপস্থাপন করে। কারণ—

কুসুম্বা মসজিদের গুরুত্ব হলো এটি মধ্যযুগীয় মুসলিম স্থাপত্যের এক उत्कृष्ट নিদর্শন, যেখানে সুলতানি আমলের কারিগরি ও বাংলা স্থাপত্যরীতির প্রভাব দেখা যায়। কালো পাথরের ব্যবহার, জটিল নকশা, ইটের গাঁথুনি, এবং বিশেষ করে এর অলঙ্কৃত পাথরের কাজ এটিকে অনন্য করে তুলেছে, যা এটিকে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান এবং জাতীয় ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দিয়েছে।

বর্তমান অবস্থা ও পর্যটন

বর্তমানে কুসুম্বা মসজিদ পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় স্থান। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা রাজশাহীর পাহাড়পুর দেখতে গিয়ে কুসুম্বা মসজিদও ভ্রমণ করেন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন আজও এখানে নামাজ আদায় করেন। এর প্রাচীন সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।

কুসুম্বা মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, বরং এটি বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্থাপত্য ঐতিহ্যের এক জীবন্ত সাক্ষ্য। প্রায় পাঁচ শতাব্দী আগে নির্মিত এই মসজিদে ইট ও কালো ব্যাসাল্ট পাথরের যুগল ব্যবহার কেবল স্থাপত্যের শক্তি ও স্থায়িত্বকেই প্রমাণ করে না, বরং বাংলার কারিগরদের সৃজনশীলতা, দক্ষতা ও শিল্পমানের উচ্চতাকেও তুলে ধরে। মসজিদের দেয়াল, মিহরাব, দরজা ও অলঙ্করণের খোদাই কেবলমাত্র ধর্মীয় আধ্যাত্মিকতাকে ফুটিয়ে তোলে না; এটি সেই সময়কার মুসলিম সমাজের শিল্পসংবেদনশীলতাকেও স্পষ্ট করে।

১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মসজিদটির মূল কাঠামো আজও দাঁড়িয়ে আছে, যা প্রমাণ করে নির্মাণশৈলীর দৃঢ়তা। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষণ কার্যক্রমের ফলে মসজিদটি নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত হয়ে উঠছে। স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায় এখনো এখানে নামাজ আদায় করে, ফলে এটি শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নয়, বরং জীবন্ত ঐতিহ্য হিসেবেও টিকে আছে।

পর্যটন ও গবেষণার ক্ষেত্রেও কুসুম্বা মসজিদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের নিকটে অবস্থিত হওয়ায় দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এই মসজিদও দর্শন করেন এবং মধ্যযুগীয় বাংলার বহুমাত্রিক ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। এটি আমাদের জাতীয় পরিচয়ের অংশ এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতীক।

অতএব বলা যায়, কুসুম্বা মসজিদ একটি স্থাপত্য নিদর্শন হয়েও ইতিহাস, ধর্ম, শিল্প ও সমাজজীবনের মিলনস্থল। এর যথাযথ সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রচার আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গৌরব বৃদ্ধি করবে। আগামী প্রজন্ম যাতে এই নিদর্শন থেকে শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা নিতে পারে, সেজন্য আমাদের দায়িত্ব হবে মসজিদটিকে সুরক্ষিত ও পরিচর্যায় রাখা।

তথ্যসূত্র

বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর – সংরক্ষিত প্রত্নস্থল সম্পর্কিত তথ্য।

রহমান, আবদুল্লাহ আল। বাংলাদেশের মুসলিম স্থাপত্যকলার ইতিহাস। ঢাকা: বাংলা একাডেমি।

হাসান, শামসুদ্দীন। বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদসমূহ।

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন – কুসুম্বা মসজিদ সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা।

Itihasar Golpo
Itihasar Golpohttps://itihasargolpo.com
Step into the past with our unforgettable historical journey. Discover the secrets of history on our captivating journey.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments