Friday, October 3, 2025
Homeবিজ্ঞানকম্পিউটার আবিষ্কারের ইতিহাস

কম্পিউটার আবিষ্কারের ইতিহাস

কম্পিউটার আবিষ্কারের ইতিহাস

গণনাযন্ত্র, সঙ্গণক বা কম্পিউটার (ইংরেজি: Computer) হল এমন একটি যন্ত্র যা সুনির্দিষ্ট নির্দেশ অনুসরণ করে গাণিতিক গণনা সংক্রান্ত কাজ খুব দ্রুত করতে পারে। কম্পিউটার (Computer) শব্দটি গ্রিক “কম্পিউট” (compute) শব্দ থেকে এসেছে। Compute শব্দের অর্থ হিসাব বা গণনা করা। আর কম্পিউটার (Computer) শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কিন্তু এখন আর কম্পিউটারকে শুধু গণনাকারী যন্ত্র বলা যায় না। কম্পিউটার এমন এক যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করে। সভ্যতার বিকাশ এবং বর্তমানে তার দ্রুত অগ্রগতির মূলে রয়েছে গণিত ও কম্পিউটারের প্রবল প্রভাব।

পশ্চিমবঙ্গে প্রথম কম্পিউটার আসে ১৯৬৪ সালে। পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তি কমিশনের পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকা-তে ১৯৬৪ সালে স্থাপিত হয় বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম কম্পিউটার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিজ্ঞান, ব্যবসা কিংবা বিনোদন—সব ক্ষেত্রেই কম্পিউটারের ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু আজকের এই বহুমুখী এবং অত্যাধুনিক কম্পিউটার হঠাৎ করেই তৈরি হয়নি। হাজার বছরের গণনার ইতিহাস, মানব মস্তিষ্কের উদ্ভাবনী চিন্তা এবং বিজ্ঞানের ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলেই এর আবিষ্কার ও বিকাশ সম্ভব হয়েছে।

প্রথম কম্পিউটার আবিষ্কার করেন কে

প্রথম কম্পিউটার আবিষ্কার করেন চার্লস ব্যাবেজ। ১৮৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে চার্লস ব্যাবেজ অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করেন। তিনি একজন ইংরেজী গণিতবিদ এবং কম্পিউটারের উদ্ভাবক ছিলেন, প্রথম স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল কম্পিউটার কল্পনা করার কৃতিত্ব তাঁর।

কম্পিউটার আবিষ্কার করেন কে এবং কত সালে

কম্পিউটারের উদ্ভাবক হিসেবে সাধারণত চার্লস ব্যাবেজ কে গণ্য করা হয়, যিনি ১৯ শতকে ডিফারেন্স ইঞ্জিন ও অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন নামে যান্ত্রিক কম্পিউটার তৈরি করেছিলেন। তবে, আধুনিক কম্পিউটারের জনক হিসেবে অ্যালান টুরিং কেও উল্লেখ করা হয়। প্রথম ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার ছিল ENIAC, যা ১৯৪৬ সালে চালু হয় এবং এটিকে আধুনিক কম্পিউটার প্রজন্ম শুরুর একটি ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়।

কম্পিউটার আবিষ্কারের জনক কে

কম্পিউটার আবিষ্কারের জনক হলেন চার্লস ব্যাবেজ। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে প্রথম প্রোগ্রামেবল কম্পিউটারের ধারণা তৈরি এবং এর নকশা তৈরি করেন। তার ধারণাগুলোই আধুনিক কম্পিউটারের ভিত্তি স্থাপন করেছে। একজন ইংরেজ প্রকৌশলী, গণিতবিদ এবং আবিষ্কারক। তিনি প্রথম যান্ত্রিক এবং প্রোগ্রামেবল কম্পিউটারের ধারণা নিয়ে এসেছিলেন। যদিও ব্যাবেজ একটি সম্পূর্ণ কার্যকরী কম্পিউটার তৈরি করতে পারেননি, তার পরিকল্পনা এবং নকশাগুলো আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

প্রাচীন গণনা যন্ত্রের শুরু

কম্পিউটারের ইতিহাসের শুরু প্রাচীন গণনা যন্ত্র, যার মধ্যে অ্যাবাকাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাবাকাস খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ সালে ব্যাবিলনে আবিষ্কৃত হয় এবং এটি গুটি বা মণি সরিয়ে গণনা করার একটি ফ্রেমে সাজানো যন্ত্র। এটি আধুনিক কম্পিউটারের একটি পূর্বসূরি এবং সংখ্যা গণনা ও গাণিতিক কাজ করার জন্য ব্যবহৃত হতো। তখনও আধুনিক কম্পিউটার ছিল না, কিন্তু মানুষ গণনা করার জন্য বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করত।

অ্যাবাকাস (Abacus): প্রায় ২৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মেসোপটেমিয়া ও চীনে ব্যবহৃত হয়। কাঠের ফ্রেমে রাখা দণ্ডে মণি বা দানা সরিয়ে গাণিতিক হিসাব করা হতো। এটি মানব ইতিহাসের প্রথম গণনা যন্ত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। ফ্রেমে সাজানো গুটিগুলো স্থান পরিবর্তন করে এটি সংখ্যা গণনা ও গাণিতিক কাজ যেমন যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ করতে সাহায্য করত। অ্যাবাকাস ছাড়াও প্রাচীনকালে অন্যান্য বিভিন্ন যান্ত্রিক কৌশল ও যন্ত্র গণনার কাজে ব্যবহৃত হতো, তবে অ্যাবাকাসকেই কম্পিউটারের ইতিহাসের প্রথম যন্ত্র হিসেবে ধরা হয়।

অ্যান্টিকাইথেরা মেকানিজম: খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে গ্রিসে আবিষ্কৃত এই যন্ত্রটি সূর্যগ্রহণ, গ্রহের অবস্থান ও জ্যোতির্বিদ্যা হিসাব করতে ব্যবহৃত হত। একে প্রাচীন বিশ্বের প্রথম যান্ত্রিক কম্পিউটার বলা হয়।

প্যাসকেলাইন (Pascaline): ১৬৪২ সালে ব্লেইজি প্যাসকেল এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন, যা যোগ ও বিয়োগ করতে পারত।

এগুলোকে আধুনিক কম্পিউটারের পূর্বসূরি হিসেবে ধরা হয়, কারণ এগুলো তথ্য প্রক্রিয়াকরণের প্রাথমিক রূপ দেখিয়েছিল।

মধ্যযুগ থেকে প্রাক-আধুনিক যুগের উন্নয়ন

কম্পিউটারের আবিষ্কার মধ্যযুগ থেকে প্রাক-আধুনিক যুগে একটি ক্রমবিকাশমান প্রক্রিয়া, যার সূচনা প্রাচীন কালের অ্যাবাকাস ও অন্যান্য গণনা যন্ত্রের মাধ্যমে শুরু হয় এবং চার্লস ব্যাবেজ ও জন ভন নিউম্যান-এর মতো উদ্ভাবকদের হাত ধরে আধুনিক কম্পিউটারের জন্ম হয়। মধ্যযুগ ও প্রাক-আধুনিক যুগে লগারিদম ও যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর এর মতো প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়, যা স্বয়ংক্রিয় গণনার ভিত্তি স্থাপন করে। আধুনিক কম্পিউটার ইলেকট্রনিক্স, বিশেষ করে ট্রানজিস্টর ও ভন নিউম্যান আর্কিটেকচার এর উপর নির্ভর করে বিকশিত হয়েছে। এই সময়কালে গণনার কৌশল ও যন্ত্রের অনেক উন্নতি সাধিত হয়। এই সময়ে প্যাসকেলাইন (১৬৪২) এবং অ্যারিথমোমিটার (১৮২০) এর মতো ক্যালকুলেটিং ডিভাইস উদ্ভাবিত হয়। লগারিদম ও গুণের জন্য আরও উন্নত পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়।

১৫শ থেকে ১৭শ শতকের মধ্যে ইউরোপে গণিত ও বিজ্ঞানে বড় ধরনের অগ্রগতি ঘটে।

জন নেপিয়ার (John Napier) ১৬১৭ সালে “নেপিয়ারস বোনস” নামে কাঠি-ভিত্তিক একটি গণনা যন্ত্র আবিষ্কার করেন।

উইলহেম শিকার্ড (Wilhelm Schickard) ১৬২৩ সালে বিশ্বের প্রথম যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর তৈরি করেন।

ব্লেইস প্যাসকেল (Blaise Pascal) ১৬৪২ সালে “প্যাসকালাইন” নামের যন্ত্র উদ্ভাবন করেন, যা যোগ ও বিয়োগ করতে পারত।

গটফ্রিড লেইবনিজ (Gottfried Leibniz) ১৬৭৩ সালে “স্টেপড রেকনার” নামের যন্ত্র তৈরি করেন, যা গুণ, ভাগ এবং বর্গমূল পর্যন্ত নির্ণয় করতে পারত। এগুলো আধুনিক কম্পিউটারের জন্য ভিত্তি তৈরি করে দেয়।

শিল্পবিপ্লব ও কম্পিউটারের ধারণা

কম্পিউটারের ধারণা শিল্পবিপ্লবের সময় স্বয়ংক্রিয় গণনার প্রয়োজনীয়তা থেকে উদ্ভূত হয়, যেখানে চার্লস ব্যাবেজকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়। তাঁর ‘ডিফারেন্স ইঞ্জিন’ ছিল প্রথম যন্ত্র, যা পরে প্রোগ্রামযোগ্য কম্পিউটারের ধারণার পথ খুলে দেয়। কম্পিউটার হলো একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং উপস্থাপন করে, যা গণিত ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিল্পবিপ্লবের যুগে (১৮শ শতক) গণনা ও তথ্য প্রক্রিয়াকরণের প্রয়োজন আরও বেড়ে যায়।

জ্যাকুয়ার্ড লুম (Jacquard Loom): ১৮০১ সালে জোসেফ মারি জ্যাকুয়ার্ড বস্ত্র বুননের জন্য ছিদ্রযুক্ত কার্ড ব্যবহার করে একধরনের স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এই “পাঞ্চ কার্ড” ধারণা পরবর্তীতে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে ব্যবহার হয়।

চার্লস ব্যাবেজ (Charles Babbage): তাঁকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়।

ডিফারেন্স ইঞ্জিন (Difference Engine): জটিল গাণিতিক টেবিল তৈরি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।

অ্যানালাইটিকাল ইঞ্জিন (Analytical Engine): এটি ছিল প্রোগ্রামেবল কম্পিউটারের প্রথম ধারণা। এতে ছিল মেমরি, প্রসেসর, ইনপুট-আউটপুট ব্যবস্থা, যা আজকের কম্পিউটারের ভিত্তি।

অ্যাডা লাভলেস (Ada Lovelace): তিনি ব্যাবেজের অ্যানালাইটিকাল ইঞ্জিনের জন্য প্রোগ্রামিং নোট লিখেছিলেন। তাঁকে বিশ্বের প্রথম প্রোগ্রামার হিসেবে সম্মান দেওয়া হয়।

বিংশ শতকের সূচনা: বৈদ্যুতিক যুগ

কম্পিউটারের আধুনিক বিবর্তনের ভিত্তি বিংশ শতকের শুরুতে বৈদ্যুতিক যুগের সূচনা করে, যা প্রথম প্রজন্মের ইলেকট্রনিক কম্পিউটার ENIAC (১৯৪৬) দ্বারা চিহ্নিত। চার্লস ব্যাবেজের যান্ত্রিক কম্পিউটার ধারণা থেকে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তির ব্যবহার, যেমন ভ্যাকুয়াম টিউব, কম্পিউটারকে যান্ত্রিক হিসাবের সাধারণ যন্ত্র থেকে বুদ্ধিমান ডিজিটাল কম্পিউটারে রূপান্তরিত করে। ১৯০০ সালের পর প্রযুক্তি দ্রুত এগোতে শুরু করে।

বৈদ্যুতিক প্রযুক্তির পরীক্ষা-নিরীক্ষা

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, গবেষকরা গণনা সম্পাদনের জন্য বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। এটি কম্পিউটারের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় ছিল, কারণ যান্ত্রিক কম্পিউটারের সীমাবদ্ধতা ছিল।

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার

১৯৪৬ সালে জনসাধারণের কাছে প্রথম ইলেকট্রনিক সাধারণ-উদ্দেশ্যের কম্পিউটার ENIAC (ইলেক্ট্রনিক নিউমেরিক্যাল ইন্টিগ্রেটর অ্যান্ড কম্পিউটার) ঘোষণা করা হয়। এই যন্ত্রগুলো ছিল আকারে বিশাল, ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করত, এবং উচ্চ শব্দ ও উত্তাপের মতো সমস্যা ছিল।

হারম্যান হলেরিথ (Herman Hollerith): ১৮৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণনার তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য পাঞ্চ কার্ড-ভিত্তিক যন্ত্র তৈরি করেন। পরে তিনি IBM প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন।

অ্যালান টুরিং (Alan Turing): ১৯৩৬ সালে “টুরিং মেশিন” এর ধারণা দেন, যা কম্পিউটারের জন্য তাত্ত্বিক ভিত্তি তৈরি করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি “বোম্ব” নামের যন্ত্র দিয়ে জার্মানির এনিগমা কোড ভাঙেন। আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশে অ্যালান টুরিংয়ের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কনরাড জুসে (Konrad Zuse): ১৯৪১ সালে জার্মান প্রকৌশলী Z3 কম্পিউটার তৈরি করেন, যেটিকে বিশ্বের প্রথম প্রোগ্রামেবল ডিজিটাল কম্পিউটার বলা হয়।

মাইক্রোপ্রসেসর: ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবনের ফলে পার্সোনাল কম্পিউটার (PC)-এর দ্রুত বিকাশ ঘটে, যা কম্পিউটারের বাজারে অনেক পরিবর্তন আনে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের জন্ম

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের জন্ম হয়, যার মূল ভিত্তি স্থাপন করেন জন অ্যাটানাসফ এবং তার ছাত্র ক্লিফোর্ড বেরি ১৯৪০-এর দশকে, এবং ১৯৪৫ সালে J. Presper Eckert ও John Mauchly ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Computer) তৈরি করেন। চার্লস ব্যাবেজকে “কম্পিউটারের জনক” বলা হলেও, তিনি মূলত যান্ত্রিক কম্পিউটারের ধারণা দিয়েছিলেন, যা আধুনিক ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের সরাসরি পূর্বসূরী নয়। যুদ্ধকালীন প্রয়োজন মেটাতে দ্রুত কম্পিউটারের উন্নয়ন ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের জন্মকে ত্বরান্বিত করে এবং ENIAC-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটারের আবিষ্কারের পথ খুলে দেয়, যা আজকের কম্পিউটারের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

কলসাস (Colossus): ১৯৪৪ সালে ব্রিটেনে তৈরি হয়, জার্মান কোড ভাঙার কাজে ব্যবহৃত হত।

ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Computer): ১৯৪৬ সালে আমেরিকায় জন মক্লি ও প্রেসপার একার্ট তৈরি করেন। এটি ছিল প্রথম বৃহৎ আকারের সাধারণ উদ্দেশ্য ইলেকট্রনিক কম্পিউটার।

EDVAC: যেখানে সংরক্ষিত প্রোগ্রামের ধারণা ব্যবহার করা হয়।

এই সময় থেকেই কম্পিউটারকে সত্যিকার অর্থে আধুনিক বৈদ্যুতিন যন্ত্র হিসেবে ধরা হয়।

কম্পিউটারের প্রজন্মভিত্তিক উন্নয়ন

কম্পিউটারের প্রযুক্তিগত বিবর্তনকে প্রজন্ম (Generation) বলা হয়, যেখানে প্রতি ধাপে নতুন ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যায়। প্রথম প্রজন্মে (১৯৪৬-১৯৫৯) ভ্যাকুয়াম টিউব, দ্বিতীয় প্রজন্মে (১৯৫৯-১৯৬৫) ট্রানজিস্টর, তৃতীয় প্রজন্মে (১৯৬৫-১৯৭১) ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC), চতুর্থ প্রজন্মে (১৯৭১-২০১০) VLSI মাইক্রোপ্রসেসর এবং পঞ্চম প্রজন্মে (২০১০-বর্তমান) ULSI (আল্ট্রা লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেশন) প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করা হয়।

এখানে কম্পিউটারের প্রজন্ম ভিত্তিক উন্নয়ন তুলে ধরা হলো:

প্রথম প্রজন্ম (১৯৪৬-১৯৫৯)

কম্পিপ্রযুক্তি: ভ্যাকুয়াম টিউব (Vacuum Tubes) ব্যবহার করা হতো।

বৈশিষ্ট্য: কম্পিউটারগুলো আকারে অনেক বড় ছিল, প্রচুর তাপ উৎপাদন করত, মেমরি ছিল খুবই সীমিত এবং চৌম্বকীয় ড্রাম (Magnetic Drum) ব্যবহার করা হতো।

উদাহরণ: ENIAC ছিল প্রথম প্রজন্মের একটি কম্পিউটার।

দ্বিতীয় প্রজন্ম (১৯৫৯-১৯৬৫)

প্রযুক্তি: ট্রানজিস্টর (Transistors) ব্যবহৃত হতো।

বৈশিষ্ট্য: ভ্যাকুয়াম টিউবের তুলনায় ট্রানজিস্টর ছোট, দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য ছিল এবং বিদ্যুৎ খরচ কম হতো।

তৃতীয় প্রজন্ম (১৯৬৫-১৯৭১)

প্রযুক্তি: ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) বা চিপ ব্যবহার করা শুরু হয়।

বৈশিষ্ট্য: কম্পিউটারগুলো আকার ও বিদ্যুৎ খরচ কমে আসে এবং কম্পিউটারের কাজ করার গতি বাড়ে।

চতুর্থ প্রজন্ম (১৯৭১-২০১০)

প্রযুক্তি: মাইক্রোপ্রসেসর এবং ভিএলএসআই (VLSI – Very Large Scale Integration) প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।

বৈশিষ্ট্য: মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহারের ফলে কম্পিউটারগুলো আকারে অনেক ছোট হয়, যেমন মাইক্রোকম্পিউটার এবং ল্যাপটপ।

পঞ্চম প্রজন্ম (২০১০-বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ)

প্রযুক্তি: আল্ট্রা লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেশন (ULSI) প্রযুক্তি, প্যারালাল প্রসেসিং (Parallel Processing) এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এর উপর ভিত্তি করে এই প্রজন্ম তৈরি হয়েছে।

বৈশিষ্ট্য: এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে AI এবং মেশিন লার্নিং-এর মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা মানুষের মতো চিন্তা ও কাজ করতে সক্ষম।

কম্পিউটারের আবিষ্কারের গুরুত্ব ও প্রভাব

কম্পিউটার আবিষ্কার আধুনিক সভ্যতার এক যুগান্তকারী ঘটনা, যা গণনাকারী যন্ত্র থেকে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, ডেটা বিশ্লেষণ, সংরক্ষণ ও যোগাযোগে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছে। এর গুরুত্ব ও প্রভাব শিক্ষা, ব্যবসা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিনোদনসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী। কম্পিউটার জীবনকে সহজ ও দ্রুততর করেছে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করেছে, কিন্তু একই সাথে অতিরিক্ত নির্ভরতা ও শারীরিক কার্যকলাপ হ্রাস করার মতো চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। কম্পিউটারের আবিষ্কার মানব সভ্যতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।

বিজ্ঞান ও গবেষণা: মহাকাশ গবেষণা, জেনেটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সবই কম্পিউটার ছাড়া অচল।

শিক্ষা: অনলাইন ক্লাস, ই-বুক, ভার্চুয়াল ল্যাব সম্ভব হয়েছে।

চিকিৎসা: রোগ নির্ণয়, সার্জারি, মেডিকেল রিসার্চে কম্পিউটার অপরিহার্য।

যোগাযোগ: ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশ্বকে একসূত্রে এনেছে।

ব্যবসা ও অর্থনীতি: ই-কমার্স, ডিজিটাল ব্যাংকিং, অটোমেশন বিশ্ব অর্থনীতিকে পাল্টে দিয়েছে।

কম্পিউটার আবিষ্কার মানব ইতিহাসের এক মহৎ অর্জন। প্রাচীন অ্যাবাকাস থেকে শুরু করে আজকের কোয়ান্টাম কম্পিউটার—প্রতিটি ধাপ মানব মেধা, বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও প্রযুক্তিগত প্রয়াসের প্রতিফলন। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে কম্পিউটার মানব জীবনে আরও বড় ভূমিকা পালন করবে।

তথ্যসূত্র

Charles Babbage Institute – University of Minnesota, History of Computing.

Computer History Museum, California, USA – Timeline of Computer History.

Ceruzzi, Paul E. (2003). A History of Modern Computing. MIT Press.

Bashe, Charles et al. (1986). IBM’s Early Computers. MIT Press.

Itihasar Golpo
Itihasar Golpohttps://itihasargolpo.com
Step into the past with our unforgettable historical journey. Discover the secrets of history on our captivating journey.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments