Friday, October 3, 2025
Homeইতিহাসগুরুদুয়ারা নানকশাহী শিখ মন্দির

গুরুদুয়ারা নানকশাহী শিখ মন্দির

শিখ মন্দির নির্মাণের ইতিহাস

গুরুদুয়ারা নানকশাহী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে অবস্থিত শিখ ধর্মের একটি উপাসনালয়। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কলা ভবনের পাশে অবস্থিত। এই গুরুদুয়ারাটি বাংলাদেশে অবস্থিত ৯-১০ টি গুরুদুয়ারার মধ্যে বৃহত্তম। বাংলাদেশে শিখ সম্প্রদায়ের সংখ্যা খুবই সীমিত। তবুও তাদের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে ঢাকার একমাত্র শিখ মন্দির, গুরুদুয়ারা নানকশাহী। ঢাকার ব্যস্ত নগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হলেও এটি এক অনন্য শান্তির আশ্রয়স্থল। গুরুদুয়ারা নানকশাহী কেবল শিখ ধর্মাবলম্বীদের কাছে নয়, বরং সকল ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষের কাছে সমতা, ভ্রাতৃত্ব ও মানবিকতার প্রতীক।

ইতিহাস ও উৎপত্তি

গুরুদুয়ারা নানকশাহী বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের পাশে অবস্থিত একটি শিখ উপাসনালয়, যা শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানকের স্মৃতি ও ধর্মপ্রচারকে সম্মান জানাতে সপ্তদশ শতকে নির্মিত হয়। এটি ১৫০৪ সালে গুরু নানকের ঢাকা আগমন ও ধর্মপ্রচারের স্থানে নির্মিত একটি স্মারক, যা পরে শিখ সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাসনালয় ও বাংলাদেশে বৃহত্তম গুরুদুয়ারা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক ১৪৬৯ সালে পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫০৪ সালে ঢাকা সফর করেন। তিনি ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে ঢাকা আসেন এবং সেখানকার একটি স্থানে অবস্থান করেন। গুরু নানক তাঁর ধর্মমত ও শিক্ষা প্রচারের জন্য ঢাকায় কিছুদিন অবস্থান করেন, যা পরবর্তীকালে নানকশাহী গুরুদুয়ারার ভিত্তি স্থাপন করে। সপ্তদশ শতকে শিখ ধর্মপ্রচারক ভাইনাথ গুরু নানকের পুণ্য স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই উপাসনালয়টি নির্মাণ করেন। অন্য তথ্য মতে, দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় শিখ ধর্মগুরু হরগোবিন্দ সিং প্রেরিত শিখ পুরোহিত আলমাস্তের প্রচেষ্টায় এটি নির্মিত হয়। তিনি ভারতবর্ষের নানা অঞ্চল, আফগানিস্তান, তিব্বত, আরবসহ বহু দেশে ভ্রমণ করেন এবং তাঁর আধ্যাত্মিক শিক্ষা প্রচার করেন। ধারণা করা হয়, তিনি বঙ্গদেশে এসেছিলেন এবং তাঁর ভ্রমণের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ঢাকায় গুরুদুয়ারা প্রতিষ্ঠিত হয়।

গুরুদুয়ারা নানকশাহীর প্রতিষ্ঠা

গুরুদুয়ারা নানকশাহী শিখদের ষষ্ঠ গুরু হর গোবিন্দ (১৬০৬-১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের পাশে অবস্থিত। জনশ্রুতি অনুসারে, হর গোবিন্দের প্রতিনিধি হিসেবে আলামস্ত নামে এক শিখ গুরু শিখদের ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ঢাকায় এসে সুজাতপুর (বর্তমান নীলক্ষেত) অঞ্চলে এই উপাসনালয়টি নির্মাণ করেন। ১৭ শতকের প্রথম দিকে শিখদের ষষ্ঠ গুরু হর গোবিন্দ ধর্ম প্রচারের উদ্যোগ নেন। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গুরু হর গোবিন্দ শিখ ধর্ম প্রচারক আলামস্তকে ঢাকায় পাঠান। আলামস্ত ঢাকায় ধর্ম প্রচার করেন এবং স্থানীয় ভক্তদের আর্থিক সহযোগিতায় বর্তমানে গুরুদুয়ারা নানকশাহী নামে পরিচিত উপাসনালয়টি নির্মিত হয়। ঢাকায় গুরু নানক দেব জির স্মরণে যে গুরুদুয়ারাটি গড়ে ওঠে, সেটিই আজকের গুরুদুয়ারা নানকশাহী। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোড এলাকায় অবস্থিত প্রাথমিকভাবে ছোট আকারের হলেও পরবর্তী সময়ে ভারতীয় শিখ সম্প্রদায় এবং স্থানীয় উদ্যোগে এটি সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়।

শিখ মন্দির স্থাপত্য

গুরুদুয়ারাটি সাদা রঙের সরল নকশায় নির্মিত, উপরে ছোট গম্বুজ রয়েছে, যা শিখ মন্দিরের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। প্রবেশপথে উড়ানো হয় নিশান সাহিব, শিখ পতাকা, যা গুরুদুয়ারার প্রতীক।

প্রধান প্রার্থনাকক্ষ (দরবার সাহিব) – এখানে রাখা থাকে গুরু গ্রন্থ সাহিব।

লঙ্গর হল – যেখানে সমবেতভাবে খাবার গ্রহণ করা হয়।

অতিথি কক্ষ – দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা।

পরিবেশ

চারপাশে সবুজ গাছপালা ও শান্ত পরিবেশ বিরাজ করে, ব্যস্ত ঢাকা শহরের ভেতরে থেকেও এখানে প্রবেশ করলে এক ধরণের প্রশান্তি অনুভূত হয়।

ধর্মীয় কার্যক্রম

শিখ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিব এখানে রাখা আছে। প্রতিদিন সকালে তা খোলা হয় (প্রকাশ) এবং রাতে তা বন্ধ করা হয় (সুখ আসন)।নিয়মিত কীর্তন বা ভজন পরিবেশন করা হয়, সঙ্গীতের মাধ্যমে গুরু গ্রন্থ সাহিবের বাণী গাওয়া হয়।বিশেষ উৎসব বা গুরুত্বপূর্ণ দিনে ৪৮ ঘণ্টা ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে গুরু গ্রন্থ সাহিব পাঠ করা হয়। গুরুদুয়ারার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো লঙ্গর, অর্থাৎ বিনামূল্যে সমবেতভাবে খাদ্য গ্রহণ। এখানে শিখ সম্প্রদায় ছাড়াও যে কেউ এসে বসে ভোজন করতে পারেন। এতে ধর্মীয় ও সামাজিক বিভাজন বিলীন হয়ে যায়।

গুরু নানক দেব জির জন্মদিন (গুরপুরব) – সবচেয়ে বড় উৎসব।

বৈশাখী – শিখ নববর্ষ।

শহীদ দিবস – গুরুদের আত্মত্যাগ স্মরণে পালন করা হয়।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা

গুরুদুয়ারা নানকশাহী শুধু শিখদের উপাসনালয়ই নয়, এটি সামাজিক সম্প্রীতি, সাম্য এবং মানবতার সেবার এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে স্বাগত, এবং এটি লঙ্গরখানার (সম্প্রদায়িক ভোজ) মাধ্যমে সামাজিক একতা ও আর্থিক সমতার বার্তা প্রচার করে। এটি সামাজিক ন্যায়বিচার, আধ্যাত্মিক ভক্তি, নিঃস্বার্থ সেবা এবং উদারতার মতো শিখ ধর্মের মূল আদর্শগুলো ধারণ ও প্রচার করে।

সামাজিক ভূমিকা

গুরু নানকের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা এখানে প্রতিফলিত হয়। জাতি, লিঙ্গ বা সামাজিক অবস্থানের পার্থক্য এখানে কাজ করে না, সকলেই সমানভাবে সম্মানিত। গুরুদুয়ারা নানকশাহী একটি সার্বজনীন স্থান, যেখানে সকল ধর্মের মানুষ প্রবেশ করতে এবং সম্মান প্রদর্শন করতে পারে। এখানে একটি সম্প্রদায়িক রান্নাঘর বা লঙ্গরখানা রয়েছে, যেখানে সকলে মিলে একসঙ্গে খাবার গ্রহণ করে। এটি আর্থিক বৈষম্য দূর করে ও সামাজিক একতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সেবা বা নিঃস্বার্থ সেবার আদর্শ এই গুরুদুয়ারার মাধ্যমে প্রচারিত হয়, যা মানুষকে সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করে।

সাংস্কৃতিক ভূমিকা

শিখ ধর্মের মূল শিক্ষা, যেমন – একেশ্বরবাদ ও আধ্যাত্মিক ভক্তি, এই গুরুদুয়ারার মাধ্যমে প্রচারিত হয়। এখানে কীর্তন বা ঐশ্বরিক স্তোত্র পরিবেশিত হয়, যা আধ্যাত্মিক ভক্তি ও ধ্যানের পরিবেশ সৃষ্টি করে। বিবাহ, দীক্ষা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো এখানে অনুষ্ঠিত হয়, যা শিখ সম্প্রদায়কে একত্রিত করে। এটি শিখ সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে, যেখানে পূর্বপুরুষদের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক ঐতিহ্য সুরক্ষিত থাকে।

শিক্ষা ও সংস্কৃতি

গুরুদুয়ারা নানকশাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঐতিহাসিক শিখ উপাসনালয় এবং এটি শিখধর্মের শিক্ষা ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। গুরু নানকের ঢাকা আগমনের স্মরণে এই উপাসনালয়টি নির্মিত হয়েছিল এবং এটি শিখদের একেশ্বরবাদ, ভ্রাতৃত্ববোধ ও ধর্মীয় আচারের শিক্ষা প্রদান করে। গুরুদ্বারে আদি গ্রন্থ পাঠ ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিখ সংস্কৃতির চর্চা করা হয় এবং এটি সকল ধর্মের মানুষকে স্বাগত জানায়।

মানবসেবা

গুরুদুয়ারার লঙ্গর প্রথা কেবল ধর্মীয় নয়, বরং সামাজিক সেবারই অংশ।যেকোনো দুর্যোগের সময় এখান থেকে সাহায্য বিতরণ করা হয়ে থাকে।

ঢাকায় শিখ সম্প্রদায়ের ভূমিকা

গুরুদুয়ারা নানকশাহীতে ঢাকার শিখ সম্প্রদায়ের ভূমিকা হলো তারা এই উপাসনালয়টিকে শুধু একটি ধর্মীয় স্থান হিসেবেই নয়, বরং সামাজিক সম্প্রীতি ও সেবার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে, যেখানে সকলের জন্য উন্মুক্ত লঙ্গরখানা ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। শিখ সম্প্রদায়ের এই উপাসনালয়টি শুধু তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসই নয়, বরং একেশ্বরবাদ, ভ্রাতৃত্ব ও মানবতার বাণী প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবেও ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে শিখদের সংখ্যা অল্প হলেও তাঁরা সমাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। গুরুদুয়ারা নানকশাহী তাদের ধর্মীয় কেন্দ্র হলেও এর দরজা সব মানুষের জন্য উন্মুক্ত। বিদেশ থেকে আসা শিখ পর্যটকেরাও এখানে নিয়মিত আসেন।

আধুনিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব

গুরুদুয়ারা নানকশাহী একটি ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ শিখ উপাসনালয়, যা আধুনিক প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সহাবস্থানের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত হওয়ায় ছাত্রছাত্রীসহ সকলের জন্য একটি উন্মুক্ত স্থান, যেখানে সব ধর্মের মানুষকে স্বাগত জানানো হয়। ‘লঙ্গরখানা’ বা বিনামূল্যে খাদ্য পরিবেশন ও সমাজসেবামূলক কাজের মাধ্যমে এটি সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবতার সেবা করে। এর অবস্থান ও বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সম্মিলিত উপস্থিতি এটিকে আধুনিক বাংলাদেশে বহুসাংস্কৃতিক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণে পরিণত করেছে।

শান্তি ও প্রশান্তির কেন্দ্র – বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মাঝে এটি এক অনন্য আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি করেছে।

আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি – এখানে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষও আসেন।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য – ঢাকায় বহু পুরনো ধর্মীয় ঐতিহ্য ধরে রাখছে এটি।

চ্যালেঞ্জ ও রক্ষণাবেক্ষণ

গুরুদুয়ারা নানকশাহী বাংলাদেশের ঢাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক শিখ উপাসনালয়, যা বর্তমানে পরিবেশগত এবং অন্যান্য কাঠামোগত চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে, বিশেষত ক্যাম্পাসের ভেতরের অবস্থান ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার কারণে। এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব মূলত শিখ ম্যানেজমেন্ট কমিটি-এর ওপর থাকে এবং এর জন্য অর্থায়ন ও সম্প্রসারণের প্রয়োজন হয়, যা বিভিন্ন সংস্কার কাজের মাধ্যমে করা হচ্ছে। শিখ সম্প্রদায়ের সংখ্যা কম হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণে মাঝে মাঝে সমস্যা হয়। তবে ভারত, বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী শিখ সংগঠনগুলোর সহায়তায় গুরুদুয়ারাটি সংরক্ষিত হচ্ছে।

ঢাকার হৃদয়ে অবস্থিত গুরুদুয়ারা নানকশাহী শুধু শিখ ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনাস্থল নয়, বরং এটি মানবতার এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। ব্যস্ত ও ভিড়াক্রান্ত নগরীর মাঝেও এটি যেন এক শান্ত আশ্রয়স্থল, যেখানে প্রবেশ করলে মনে হয় সময় কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেছে। গুরু নানক দেব জির শিক্ষা—ঈশ্বরের একত্ব, সকল মানুষের সমতা, আর নিঃস্বার্থ সেবা—আজও এই গুরুদুয়ারার প্রতিটি কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়।

এই গুরুদুয়ারার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো উন্মুক্ততা। এখানে কোনো ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ বা সামাজিক অবস্থান দেখে প্রবেশের বিধিনিষেধ নেই। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান কিংবা অন্য যে কোনো ধর্মের মানুষ এখানে এসে একই সারিতে বসে লঙ্গরে খাবার খেতে পারে, কীর্তন শুনতে পারে কিংবা নীরবে ধ্যান করতে পারে। এই সমতার বার্তাই আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধকে শক্তিশালী করে।

ঢাকার মতো একটি বহুধর্মীয়, বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশে গুরুদুয়ারা নানকশাহী একটি অনন্য সেতুবন্ধনের কাজ করছে। একদিকে এটি শিখ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যকে জীবন্ত রেখেছে, অন্যদিকে এটি সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি একটি জীবন্ত পাঠশালা, যেখানে শিখ ধর্মের ইতিহাস, আধ্যাত্মিক দর্শন এবং মানবিক মূল্যবোধ শেখা যায়।

আধুনিক সমাজে যখন বৈষম্য, হিংসা ও ধর্মীয় বিভাজন দিন দিন বেড়ে চলেছে, তখন গুরুদুয়ারা নানকশাহী আমাদের নতুন করে মনে করিয়ে দেয়—মানুষই মানুষের পাশে থাকার সবচেয়ে বড় শক্তি। গুরুদুয়ারা নানকশাহী শুধু শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় কেন্দ্র নয়; এটি বাংলাদেশের বহুধর্মীয় সহাবস্থানের এক অনন্য নিদর্শন। এটি প্রমাণ করে, মানবতার পথ সবসময় ধর্মের সীমানা অতিক্রম করে বৃহত্তর ঐক্যের দিকে নিয়ে যায়।

অতএব, গুরুদুয়ারা নানকশাহীকে কেবল শিখদের গৌরব নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের একটি মূল্যবান সাংস্কৃতিক ও মানবিক ঐতিহ্য হিসেবে দেখা উচিত। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি আমাদের শেখায়—মানবসেবা-ই প্রকৃত ধর্ম, আর সমতাই প্রকৃত সমাজের ভিত্তি।

তথ্যসূত্র

Singh, Khushwant. A History of the Sikhs. Oxford University Press, 2004.

“Gurdwara Nanakshahi, Dhaka” – Sikhnet.com

Grewal, J.S. The Sikhs of the Punjab. Cambridge University Press, 1998.

বাংলাদেশে শিখ মন্দির সম্পর্কিত স্থানীয় তথ্য – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, ফুলার রোড।

গুরুদুয়ারা নানকশাহী কমিটি, ঢাকা (মৌখিক ইতিহাস ও স্থানীয় অনুসন্ধান)।

Itihasar Golpo
Itihasar Golpohttps://itihasargolpo.com
Step into the past with our unforgettable historical journey. Discover the secrets of history on our captivating journey.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments