ইথিওপিয়ার মুরসি নারীদের অনন্য পরিচয়
ঠোঁটের প্লেটে আঁকা সংস্কৃতি
পৃথিবীর নানা প্রান্তে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা ভিন্ন। আফ্রিকার হূদয় থেকে উঠে আসা ইথিওপিয়ার মুরসি উপজাতির নারীরা এক ভিন্ন সৌন্দর্যবোধ ও সংস্কৃতির ধারক—তাদের ঠোঁটে থাকা বড় মাটির বা কাঠের প্লেট এই চর্চার চোখে পড়ার মতো প্রতীক।
দক্ষিণ ইথিওপিয়ার দেবুব ওমো অঞ্চলে বসবাসকারী মুরসি উপজাতি, যারা নিজেদের ‘মুন’ নামে ডাকেন, তারা সুরমিক জাতিগত গোষ্ঠীর অন্তর্গত। বহির্বিশ্বে তারা সবচেয়ে বেশি পরিচিত এই ঠোঁট প্লেট পরার প্রথার জন্য।
ইতিহাসের পেছনের গল্প
এই প্রথার শিকড় অনেক গভীরে। কিছু ইতিহাসবিদ বিশ্বাস করেন, দাসত্বের যুগে এই চর্চার সূচনা—মেয়েরা নিজেদের কম আকর্ষণীয় করে তুলতেন যাতে দাস ব্যবসায়ীদের চোখে না পড়েন। কিন্তু সময়ের সাথে এটি হয়ে ওঠে গর্ব, সৌন্দর্য এবং পরিচয়ের প্রতীক।
কিভাবে শুরু হয় এই রীতি?
বয়ঃসন্ধিকালে, সাধারণত ১৫ বা ১৬ বছর বয়সে, একজন মুরসি কিশোরীর ঠোঁটে প্রথম ছোট কাঠের প্লাগ বসানো হয়। তারপর ধীরে ধীরে বড় হয় প্লেটের আকার—কখনও কখনও ব্যাসে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত! বড় ঠোঁটের প্লেট বোঝায় নারীর উর্বরতা, শক্তি, এবং বৈবাহিক যোগ্যতা।
আরো কিছু সাংস্কৃতিক দিক
এই ঠোঁট প্লেট অনেক সময় নির্ধারণ করে একটি মেয়ের যৌতুকের মূল্যও, যা সাধারণত গরু দিয়ে পরিমাপ করা হয়। যে নারীরা এটি পরতে চান না, তারা সমাজে কম মর্যাদাপূর্ণ বলে বিবেচিত হন।
বাইরের দৃষ্টিতে এই রীতি চরম মনে হতে পারে। কিন্তু মুরসি সংস্কৃতিতে এটি অধ্যবসায়, সাহসিকতা এবং পারিবারিক আনুগত্যের প্রতীক। এমনকি স্থানীয়ভাবে বিশ্বাস করা হয়, এটি দাম্পত্য জীবনে শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক—কারণ এর ফলে মেয়েরা কম কথা বলেন!
সংস্কৃতির প্রতিফলন
এই প্রথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, সৌন্দর্য বা পরিচয়ের সংজ্ঞা সর্বত্র এক নয়। একটি নির্দিষ্ট সমাজের ইতিহাস, অভিজ্ঞতা ও মানসিকতার মধ্য দিয়েই এগুলোর গঠন হয়। মুরসি নারীদের ঠোঁট প্লেট তাই শুধুই অলংকার নয়, বরং একটি সমাজের শতাব্দীপ্রাচীন আত্মপরিচয়ের অংশ।
মূল উৎসসমূহ:
Smithsonian National Museum of Natural History – African Voices Exhibit
➤ এই প্রদর্শনীতে মুরসি নারীদের ঠোঁট প্লেটের সামাজিক গুরুত্ব, আত্মপরিচয় এবং নানান দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে।
🔗 https://naturalhistory.si.edu/exhibits/african-voices