রহস্যময় জীবন ও মৃত্যু
১৯২১ সালে ডেনমার্কের এগ্টভেদ নামক একটি ছোট্ট গ্রামে ঘটে যায় এক চমকপ্রদ আবিষ্কার। একটি কৃষকের জমিতে পাওয়া যায় প্রায় ৩,৪০০ বছর পুরোনো একটি সমাধি, আর সেই সমাধির কেন্দ্রে শায়িত ছিল এক কিশোরী মেয়ে—ইতিহাসে যাকে আমরা আজ জানি “এগ্টভেদ গার্ল” নামে।
কাঠের কফিনে ঘুমন্ত রাজকুমারী?
তাকে পাওয়া গিয়েছিল একটি ওক গাছের কাঠের তৈরি কফিনে, যা ছিল অসাধারণভাবে সংরক্ষিত। তার শরীরের চারপাশে মোটা পশমের কম্বল, একটি পুরু কোমরের বেল্ট, ক্ষুদ্র দেহের একটি স্কার্ট এবং ব্রোঞ্জের অলংকার ছিল। কফিনের মধ্যে একটি ঝাঁকড়া দাঁতের চিরুনি এবং এক শিশুকণ্ঠীও পাওয়া যায়।
ডিএনএ ও চুলের বিশ্লেষণ কী বলছে?
আধুনিক গবেষণা এগিয়ে গিয়ে চুল ও দাঁতের আইসোটোপ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই মেয়েটির জন্মস্থান ও জীবনচক্র সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে। জানা গেছে, এগ্টভেদ গার্ল সম্ভবত দক্ষিণ জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং মৃত্যুর আগের বছরগুলোতে অনেক ভ্রমণ করেছিলেন—ডেনমার্ক, জার্মানি ও ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে।
তার খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবেশের তারতম্যের কারণেই ধারণা করা হয় তিনি ছিলেন একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে, যাকে হয়তো কূটনৈতিক বিবাহ বা ধর্মীয় কারণে দূর দেশে পাঠানো হয়েছিল।
কেন এই রহস্যময় মৃত্যু?
যখন তাকে কবর দেওয়া হয়, তার বয়স ছিল আনুমানিক ১৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। তবে মৃত্যুর কারণ এখনো অনিশ্চিত। তার দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। এটি কি কোনো রোগে মৃত্যু? নাকি কোনো ধর্মীয় বলিদান? ইতিহাস এখনো নিরুত্তর।
একটি বৃহত্তর সভ্যতার প্রতিচ্ছবি
এগ্টভেদ গার্ল কেবল একজন প্রাচীন কিশোরী নয়—তিনি উত্তর ইউরোপের ব্রোঞ্জ যুগের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের এক জীবন্ত দলিল। তার সমাধি এবং পোশাক থেকে বোঝা যায়, সেই সময়েও অঞ্চলভিত্তিক ভিন্ন সভ্যতার মধ্যে সংযোগ ছিল, ছিল উচ্চশ্রেণির নারী পুরুষদের দূর দেশে যাত্রা ও ভূমিকা।
আজকের অবস্থান
আজ এগ্টভেদ গার্লের কফিন ও কিছু পরিধেয় দ্রব্য রাখা আছে ডেনমার্কের জাতীয় জাদুঘরে (National Museum of Denmark)। প্রত্নতত্ত্বের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শনার্থী—সবাই তার নিথর দেহে ইতিহাসের নিঃশব্দ গল্প খুঁজে পান।
“এগ্টভেদ গার্ল” শুধু একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নাম নয়, বরং ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল। তার জীবন ও মৃত্যুর চারপাশে জড়িয়ে থাকা রহস্য আমাদের প্রাচীন সভ্যতার জটিলতা ও গভীরতাকে স্পষ্ট করে তোলে। সে যেন প্রাচীন ইউরোপের এক নীরব বার্তাবাহক, যার দেহ বলছে হাজার বছরের পুরোনো কথা।
তথ্যসূত্র:
The National Museum of Denmark – Egtved Girl
👉 https://en.natmus.dk
(এগ্টভেদ গার্ল-এর মূল কফিন ও সংগ্রহ এই জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।)
kristiansen, Kristian & Frei, Karin Margarita et al. (2015).
“Tracing the dynamic life of a Bronze Age girl: A multidisciplinary study of the Egtved burial.”
➤ প্রকাশিত: Scientific Reports, Nature Publishing Group
DOI: 10.1038/srep10431