Friday, October 3, 2025
Homeসংস্কৃতিবৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মমি

বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মমি

বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মমি

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় মাঝে মাঝে এমন কিছু আবিষ্কার হয়, যা ধর্মীয় আচার, দার্শনিক বিশ্বাস এবং আত্মত্যাগের চরম নিদর্শন হয়ে ওঠে। সোকুশিনবুতসু (Sokushinbutsu) এমনই এক রহস্যময় ও আলোচিত প্রথা—যেখানে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা নিজেরাই ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতেন, এক বিশেষ উপবাস ও সাধনার মাধ্যমে।

কী ছিল সোকুশিনবুতসু প্রথা?

জাপানের ইয়ামাগাটা অঞ্চলের কিছু বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বিশ্বাস করতেন, তারা যদি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নিজ শরীরকে মৃত্যুর পরও অক্ষত রাখতে পারেন, তবে তারা একধরনের বুদ্ধত্বে পৌঁছাবেন। এই প্রক্রিয়ায়:

প্রথম ধাপ: কয়েক বছর ধরে শুধু বাদাম, বীজ ও গাছের ছাল খেয়ে শরীর থেকে চর্বি ঝরানো হতো।

পরবর্তী ধাপ: একপ্রকার বিষাক্ত চা পান করানো হতো, যা শরীরের ব্যাকটেরিয়া ও কীট মেরে ফেলত (শরীর সংরক্ষণের জন্য)।

চূড়ান্ত ধাপ: সন্ন্যাসী একটি ছোট পাথরের গুহায় (বা বাক্সে) গিয়ে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করতেন।

তাঁর মৃত্যুর পরে, যদি দেহটি পচন না ধরতো এবং প্রাকৃতিকভাবে মমি হয়ে যেত, তবে তাকেই ‘সত্যিকারের সোকুশিনবুতসু’ হিসেবে পূজা করা হতো।

আবিষ্কৃত মূর্তির অভ্যন্তরে মমি

২০১৫ সালে নেদারল্যান্ডসে একটি চীনা বৌদ্ধ মূর্তি বিশ্লেষণ করা হয়, যেখানে CT স্ক্যান ও এক্স-রে প্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যায়, ভেতরে একটি আসীন মমি আছে। এই দেহাবশেষ প্রায় ১,০০০ বছরের পুরনো এবং গবেষকরা আরও আশ্চর্য হন যখন দেখেন, সন্ন্যাসীর কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জায়গায় পাণ্ডুলিপির স্ক্রোল (সম্ভবত ধর্মীয় শাস্ত্র) রাখা ছিল।

এই ধরনের আবিষ্কার শুধু বিজ্ঞান বা ইতিহাসের নয়, বরং ধর্ম, দর্শন এবং সংস্কৃতির এক অসাধারণ মিলনবিন্দু।

কোথায় কোথায় এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে?

জাপান: সবচেয়ে বেশি সোকুশিনবুতসু প্রমাণিত সন্ন্যাসীর দেহ জাপানেই পাওয়া গেছে।

চীন ও তিব্বত: কিছু বৌদ্ধ মূর্তির ভেতরে মৃতদেহ সংরক্ষণের চিত্র পাওয়া যায়।

ইউরোপ (বিশ্লেষণ):

চীনা শিল্পকর্ম বা ধর্মীয় সামগ্রী সংগ্রহের অংশ হিসেবে অনেক মূর্তি ইউরোপে পৌঁছেছে এবং আধুনিক প্রযুক্তিতে তাদের রহস্য উদঘাটিত হচ্ছে।

সোকুশিনবুতসু প্রথা একটি চরম আত্মনিয়ন্ত্রণ, বিশ্বাস ও ত্যাগের দৃষ্টান্ত। এটি ধর্ম ও দেহতত্ত্বের সীমারেখাকে অতিক্রম করে মানব ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় তৈরি করেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় এমন আবিষ্কার শুধু অতীতের পর্দা উন্মোচনই করে না, বরং আমাদের আত্মচিন্তা ও বিশ্বাসের জগতকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করে।

মূল তথ্যসূত্র ও গবেষণা প্রবন্ধ

Meander Medical Center (Netherlands) – 2015 Analysis

২০১৫ সালে নেদারল্যান্ডসের Meander Medical Center-এ একটি চীনা বৌদ্ধ মূর্তির CT স্ক্যান ও এন্ডোস্কোপি করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, মূর্তির ভিতরে এক সন্ন্যাসীর আসীন মমি আছে।

সংবাদ প্রতিবেদন:

BBC News – “Mummified monk revealed inside ancient statue” (Feb 2015)

CNN – “Mummified monk found inside 1,000-year-old Buddha statue” (2015)

Drents Museum & Chinese Researchers

উক্ত মূর্তিটি প্রথমে ডাচ Drents Museum-এ প্রদর্শিত হয় এবং পরে চীনের গবেষকরা নিশ্চিত করেন যে এটি সম্ভবত লি চুয়ান (Liuquan) নামের একজন চীনা সন্ন্যাসীর দেহ, যিনি ১১শ শতকে মারা যান।

Academic Source – Sokushinbutsu Studies

Stone, Jacqueline Ilyse. “Original Enlightenment and the Transformation of Medieval Japanese Buddhism.” University of Hawaii Press, 1999.

Faure, Bernard. “The Rhetoric of Immediacy: A Cultural Critique of Chan/Zen Buddhism.” Princeton University Press, 1991.

এই গ্রন্থগুলোতে সোকুশিনবুতসু প্রথার ধর্মীয় পটভূমি, ইতিহাস এবং দর্শন ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

Smithsonian Magazine Article

“Inside the Ancient Practice of Self-Mummification” – বিস্তারিতভাবে সোকুশিনবুতসু প্রক্রিয়া, ইতিহাস এবং বিভিন্ন দেহাবশেষের সন্ধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

Itihasar Golpo
Itihasar Golpohttps://itihasargolpo.com
Step into the past with our unforgettable historical journey. Discover the secrets of history on our captivating journey.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments