Friday, October 3, 2025
Homeজীবনীজীবনানন্দ দাশের জীবনী

জীবনানন্দ দাশের জীবনী

জীবনানন্দ দাশের জীবনী

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে জীবনানন্দ দাশ এক অনন্য কবি।একজন প্রখ্যাত বাঙালি কবি, যিনি রূপসী বাংলার কবি হিসেবে পরিচিত।। আধুনিক বাংলা কবিতার এক স্বতন্ত্র ধারার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি স্বীকৃত। রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগে তিনি বাংলা কবিতায় যে নতুন স্রোত বইয়ে দিয়েছিলেন, তা কেবল বাংলা সাহিত্যকেই সমৃদ্ধ করেনি, বরং বিশ্বকবিতার সঙ্গেও বাংলাকে নতুনভাবে যুক্ত করেছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী জীবনানন্দ পেশায় ছিলেন অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক।

জীবনানন্দ দাশের ছদ্মনাম কি

জীবনানন্দ দাশের উল্লেখযোগ্য ছদ্মনামগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘শ্ৰী’, ‘কালপুরুষ’, এবং ‘নাদাপেটা হাঁদারাম’। তিনি এই ছদ্মনামগুলো ব্যবহার করে লেখালেখি করতেন।

জীবনানন্দ দাশের শৈশব ও শিক্ষাজীবন

জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা বাড়িতে মায়ের কাছে শুরু হয় এবং আট বছর বয়সে ১৯০৮ সালে তিনি বরিশালের ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯১৫ সালে ব্রজমোহন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯১৭ সালে একই কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। এরপর ১৯১৯ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ এবং ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক, সমাজসেবক এবং ব্রহ্মবাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তাঁর মা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন একজন কবি, যা সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে তাঁকে প্রভাবিত করেছিল। “আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে…” কবিতাটি কুসুমকুমারী দাশের লেখা। অর্থাৎ সাহিত্যিক পরিবারেই জীবনানন্দের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। শিক্ষাজীবন থেকেই তাঁর মধ্যে সাহিত্যচর্চার আগ্রহ জন্ম নেয়।

জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যজীবনের সূচনা

জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যজীবনের সূচনা হয়েছিল মূলত মায়ের প্রভাবে এবং প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯১৯ সালে “ব্রহ্মাবাদী” পত্রিকায়। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরাপালক প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে এবং তাঁর আধুনিকতার ছাপ ও স্বতন্ত্র কাব্যশৈলী পরবর্তী কাব্যগ্রন্থগুলোতেই বিকশিত হয়, যা তাঁকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এই গ্রন্থ প্রকাশের পরই সাহিত্য সমাজে তিনি আলোচনায় আসেন। প্রথম জীবনে তাঁর কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রভাব লক্ষণীয় ছিল। তবে ক্রমে তিনি নিজের স্বতন্ত্র কাব্যভাষা নির্মাণ করেন। আধুনিক নগর-জীবনের বেদনা, প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক, একাকিত্ব, স্মৃতিমগ্নতা ও নস্টালজিয়া তাঁর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য।

জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ

জীবনানন্দ দাশের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ঝরা পালক (১৯২৭), ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬), বনলতা সেন (১৯৪২), মহাপৃথিবী (১৯৪৪), সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮), জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪), রূপসী বাংলা (১৯৫৭), এবং বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১)। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয়। জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থটি নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর ‘জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থটিও ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে।

জীবনানন্দ দাশের উপন্যাসের নাম

জীবনানন্দ দাশ মূলত একজন কবি হলেও তিনি অনেকগুলো উপন্যাস রচনা করেছিলেন যা তাঁর মৃত্যুর পর আবিষ্কৃত হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য অপ্রকাশিত উপন্যাসগুলির মধ্যে রয়েছে বিভা, জলপাইহাটি, বাসমতীর উপাখ্যান, এবং সফলতা-নিষ্ফলতা। জীবনানন্দ দাশের উপন্যাসগুলো তাঁর মৃত্যুর পর আবিষ্কৃত হয় এবং পরবর্তীতে তাঁর সাহিত্যকর্মের অংশ হিসেবে প্রকাশিত হয়। তাঁর উপন্যাসের সংখ্যা অনেক এবং সেগুলো বিভিন্ন সময়ে লেখা হয়েছিল।

জীবনানন্দ দাশের কবিতা সমগ্র

জীবনানন্দ দাশ বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাংলা কবি। তাঁকে বাংলাভাষার “শুদ্ধতম কবি” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে যখন তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম কবিতে পরিণত হয়েছেন।

জীবনানন্দ দাশের কাব্যচেতনা ও বৈশিষ্ট্য

জীবনানন্দ দাশের কাব্যচেতনা ছিল মূলত স্বপ্নময়, মনস্তাত্ত্বিক এবং পরাবাস্তব; তাঁর কবিতায় গ্রাম বাংলার প্রকৃতি, ইতিহাস, প্রেম, মৃত্যু এবং এক গভীর বিষণ্ণতা ও শূন্যতাবোধ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে পঞ্চেন্দ্রিয় গ্রাহ্য প্রকৃতির নিপুণ বর্ণনা, আধুনিক মনস্তত্ত্বের প্রতিফলন, এবং ভিন্নধর্মী শব্দচয়ন ও রূপকল্পের ব্যবহার। জীবনানন্দ দাশকে আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ বলা হয়। তাঁর কবিতার কিছু বৈশিষ্ট্য হলো—

জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলা

প্রকৃতিনির্ভরতা – বাংলার প্রকৃতি তাঁর কবিতায় এক অনন্য মাত্রা পেয়েছে। ধানক্ষেত, নদী, বন, মাঠ, গ্রামীণ বাংলার দৃশ্য তাঁর কবিতায় প্রতিনিয়ত ফিরে আসে।

সময়ের অনুভব – তিনি সময় ও ইতিহাসকে কবিতায় নতুন রূপে ব্যাখ্যা করেছেন।

অস্তিত্ববাদী বোধ – একাকিত্ব, মৃত্যু, জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব, অনিশ্চয়তা—এসব অস্তিত্ববাদী ধারণা তাঁর কবিতায় স্পষ্ট।

ভাষার স্বাতন্ত্র্য – তিনি রবীন্দ্রনাথের অলঙ্কারময় ভাষা থেকে সরে এসে সহজ, অথচ গাঢ়-প্রতীকী ভাষা ব্যবহার করেছেন।

আধুনিকতা – তাঁর কবিতায় নগরজীবনের ক্লান্তি, হতাশা, বিচ্ছিন্নতা আধুনিক মানুষকে গভীরভাবে স্পর্শ করে।

শিক্ষকতা ও জীবিকার সংগ্রাম

জীবনানন্দ দাশ তাঁর জীবনে শিক্ষকতা এবং অন্যান্য পেশায় যুক্ত থাকলেও জীবিকার জন্য তাকে সারাজীবন সংগ্রাম করতে হয়েছে। তিনি বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেছেন, কিন্তু কোথাও স্থায়ী হতে পারেননি এবং দুই দফায় দীর্ঘ বেকার জীবনে অর্থকষ্টে জীবনযাপন করেছেন। তাঁর স্ত্রী লাবণ্য দাশ শিক্ষকতা করে কিছুটা অভাব পূরণ করতেন। তিনি ইন্সুরেন্স এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন, গৃহশিক্ষকতা করেছেন এবং ব্যবসার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু দারিদ্র্য ও অনটন তাঁর কর্মজীবনের সঙ্গী ছিল। তবে জীবিকা নিয়ে তাঁকে প্রচুর সংগ্রাম করতে হয়েছিল। তাঁর সাহিত্য প্রতিভা সমসাময়িক সমাজে যথেষ্ট মূল্যায়িত হয়নি। ফলে আর্থিক অনটন তাঁর জীবনের সঙ্গী ছিল।

জীবনানন্দ দাশের ব্যক্তিজীবন

জীবনানন্দ দাশ ১৯৩০ সালের ৯ মে ঢাকার ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে রোহিণীকুমার গুপ্তের কন্যা লাবণ্য গুপ্তকে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান ছিল – কন্যা মঞ্জুশ্রী দাশ এবং পুত্র সমরানন্দ দাশ। অভিনেত্রী অপর্ণা সেন তাঁর ভাগ্নি ছিলেন। তাঁর জীবিকা অনিশ্চিত ছিল এবং তাঁর জীবন গ্রিক ট্র্যাজেডির নায়কের মতো নিয়তি তাড়িত ছিল, যেখানে কোনো সুখের মুহূর্তের দেখা পাওয়া যায়নি, এমনটাই বলেছেন অনেকে। পারিবারিক জীবনে তিনি খুব সুখী ছিলেন না। আর্থিক টানাপোড়েন ও ব্যক্তিগত জটিলতাও তাঁকে কষ্ট দিয়েছে।

জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু

জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু ছিল অত্যন্ত করুণ। ১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর কলকাতার বালিগঞ্জে তিনি একটি ট্রামের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। ভেঙ্গে যায় কণ্ঠ, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়। হাসপাতালে ভর্তি করার পর ২২ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৫৫ বছর।

জীবনানন্দের সাহিত্যকীর্তির গুরুত্ব

জীবনানন্দ দাশ বাংলা কবিতায় আধুনিকতার প্রবর্তক হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যিনি প্রকৃতির চিত্রকল্প ও নিজস্ব শব্দশৈলী দিয়ে কাব্যজগতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছেন এবং ‘রূপসী বাংলার কবি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি বাংলা সাহিত্যে আন্তর্জাতিক ধারার সঙ্গে ঐতিহ্যকে যুক্ত করেছেন এবং তাঁর সৃষ্টিশীলতা আজও সমালোচক ও পাঠক মহলে সমাদৃত। জীবনানন্দ দাশ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অনন্য কণ্ঠস্বর। রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগে তিনি আধুনিকতার নতুন সংজ্ঞা দিয়েছেন। তাঁর কবিতায় যেমন বাংলার প্রকৃতি রূপসী হয়ে ধরা দিয়েছে, তেমনি ধরা দিয়েছে মানুষের গভীর বেদনা ও অস্তিত্বের প্রশ্ন। “বনলতা সেন”, “আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে”, “রূপসী বাংলা” ইত্যাদি কবিতা তাঁকে অমরত্ব দিয়েছে। আজকের বিশ্বসাহিত্যের আলোচনাতেও তাঁর নাম উচ্চারিত হয়।

জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এমন এক কবি, যিনি বাংলা কবিতাকে এক নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা কাব্যধারা এক সময়ে যেন দিশাহীন হয়ে পড়ছিল—রবীন্দ্র-অনুসরণই তখন অনেকের কাছে কবিতার একমাত্র পথ। সেই সময় জীবনানন্দ একেবারে ভিন্ন স্বর নিয়ে আবির্ভূত হন। তিনি কেবল রবীন্দ্র-প্রভাবমুক্ত হননি, বরং তাঁর কাব্যে এমন এক অনন্য সুর এনেছিলেন যা বাংলা কবিতাকে বিশ্বকবিতার আধুনিক ধারার সঙ্গে যুক্ত করেছিল।

জীবনানন্দ দাশ ছিলেন মূলত একজন নিভৃতচারী কবি। তিনি আলো-ঝলমলে সাহিত্যসভা বা খ্যাতির মঞ্চে আসেননি, বরং নিভৃতে নিজের জগৎ গড়েছিলেন। এজন্যই তাঁকে অনেক সময় “কবিদের কবি” বলা হয়। জীবদ্দশায় তিনি যথাযথ মর্যাদা পাননি, কিন্তু মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে তাঁর কাব্যের আসল মহিমা মানুষ উপলব্ধি করতে শুরু করে।

আজ বাংলা সাহিত্য বিশ্লেষকরা একবাক্যে স্বীকার করেন যে, রবীন্দ্রনাথের পরে জীবনানন্দই বাংলা কবিতার সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর। তাঁর কবিতার চিত্রকল্প, ভাষার সরলতা অথচ প্রতীকময়তা, প্রকৃতি ও জীবনের মিশ্রণ বাংলা কবিতাকে চিরকালীন আধুনিকতার আসনে বসিয়েছে।

তাই বলা যায়—জীবনানন্দ দাশ কেবল একজন কবি নন, তিনি বাংলা সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর কবিতা আমাদের বাংলার মাটির গন্ধ দেয়, আমাদের ইতিহাস ও অস্তিত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়, আমাদের শিখিয়ে দেয় নিঃসঙ্গতার ভেতরেও সৌন্দর্য খুঁজে নিতে। যতদিন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বেঁচে থাকবে, ততদিন জীবনানন্দ দাশের নাম ও তাঁর অমর কবিতা অম্লান থাকবে।

তথ্যসূত্র

দাশগুপ্ত, অমিয় ভট্টাচার্য। জীবনানন্দ দাশের কাব্যচেতনা, কলকাতা, ১৯৮৬।

সেন, সুকুমার। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৭৮।

দাশ, জীবনানন্দ। রূপসী বাংলা, প্রথম প্রকাশ ১৯৫৭।

অশোক মিত্র। বাংলা আধুনিক কবিতা ও জীবনানন্দ, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ১৯৯২।

অনলাইন আর্কাইভ: বাংলা একাডেমি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল লাইব্রেরি।

Itihasar Golpo
Itihasar Golpohttps://itihasargolpo.com
Step into the past with our unforgettable historical journey. Discover the secrets of history on our captivating journey.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments