বিমান দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া দুই যাত্রী অলৌকিক মিল!
অলৌকিক বাঁচার আসন? দুই বিমানে দুর্ঘটনা, দুই যাত্রী বেঁচে ফেরে একই সিটে! মাঝে মাত্র সময়ের ব্যবধান ২৭ বছর। কিন্তু দুটি ভিন্ন ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া দুইজন যাত্রীর মধ্যে রয়েছে এক আশ্চর্য মিল—তাঁরা দু’জনই বসেছিলেন একই আসনে, Seat 11A। এই অসম্ভব মিল অনেকের চোখে কাকতালীয় হলেও, নেটদুনিয়ায় এর নাম হয়ে গেছে: “Miracle Seat 11A”।
১৯৯৮: থাইল্যান্ডের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা
১১ ডিসেম্বর ১৯৯৮। থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইট TG261 দক্ষিণ থাইল্যান্ডের সুরাট থানি বিমানবন্দরে অবতরণকালে বিধ্বস্ত হয়। যাত্রী ছিলেন ১৪৬ জন। প্রাণ হারান ১০১ জন। তবে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান একজন তরুণ—থাই অভিনেতা ও গায়ক রুয়াংসাক লয়চুসাক (Ruangsak Loychusak)।
তিনি যে সিটে বসেছিলেন, তা ছিল—১১A। ঘটনার পর তিনি দীর্ঘ ১০ বছর বিমানে উঠতে পারেননি। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কীভাবে ভয়, অপরাধবোধ আর জীবনের নতুন উপলব্ধি তাঁকে বদলে দেয়। তিনি বলেন, “এই জীবনটা যেন আমার দ্বিতীয় জন্ম।”
২০২৫: ভারতীয় বিমানের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা
ঠিক ২৭ বছর পর, ২০২৫ সালের ১২ জুন। আমদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট AI171, বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই, মাত্র ৬০০-৮০০ ফুট উঁচুতে, বিমানটি আচমকাই নেমে আসে এবং একটি মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলে ধাক্কা মেরে আগুন ধরে যায়। বিমানে ছিলেন ২৩০ জন যাত্রী ও ১২ জন ক্রু। প্রায় সবাই নিহত হন।
**শুধু একজন বেঁচে যান—ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাস কুমার রমেশ। আর তাঁর সিট নম্বর? আবারও—১১A!
হাসপাতালের শয্যা থেকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,
“একসময় মনে হচ্ছিল, আমি বুঝি মারা যাচ্ছি। পরে চোখ খুলে দেখি, এখনও বেঁচে আছি। তখনই সিটবেল্ট খুলে বেরিয়ে আসি।”
১১A-এর অলৌকিকতা?
এই আশ্চর্য মিল প্রকাশ্যে আসতেই নেটদুনিয়ায় রীতিমতো তোলপাড়। অনেকেই বলছেন, Seat 11A-এ যেন লুকিয়ে আছে এক রহস্যময় সুরক্ষা।
থাই গায়ক রুয়াংসাক নিজের ফেসবুক পোস্টে থাই ভাষায় লেখেন:
“ভারতের একটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে গেছেন একজন। তাঁর সিটও ছিল ১১A—ঠিক আমার মতো!”
তিনি জানান, যদিও তাঁর সেই সময়কার বোর্ডিং পাস নেই, কিন্তু সংবাদ প্রতিবেদনে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ ছিল যে তিনি ১১A-তে বসেছিলেন।
সংখ্যাতত্ত্ব ও কাকতালীয় মিল
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকেই টেনে আনছেন সংখ্যাতত্ত্বের ব্যাখ্যা। কেউ কেউ বলছেন, সংখ্যার মধ্যে রয়েছে এক গভীর প্রভাব ও প্রতীক।
উদাহরণ হিসেবে কেউ কেউ বলছেন, গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির নম্বর ছিল ১২০৬, আর তাঁর মৃত্যু ঘটেছে ১২ জুন—যে তারিখে এই বিমান দুর্ঘটনাও ঘটে। কেউ বিশ্বাস করেন, কেউ করেন না। কিন্তু ১১A এখন শুধুই একটি সিট নয়, বরং হয়ে উঠেছে এক “অলৌকিক প্রতীক“।
কাকতালীয় না অলৌকিক?
সাধারণত ১১A সিট কেউ বেছে নিতে চান না—জানালার পাশের এই সিটটির ঠিক সামনে থাকে ইমার্জেন্সি এক্সিটের দেয়াল, তাই কিছুটা জায়গা কম। কিন্তু এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ খুঁজে নিচ্ছেন এই সিটটিকেই। কারও মতে, এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান আসন!
বাস্তবেই কি এটি কেবল কাকতালীয়?
নাকি ১১A-তে লুকিয়ে আছে কোনও অদৃশ্য আশীর্বাদ? উত্তর হয়তো সময়ই দেবে। কিন্তু একথা বলাই যায়—Seat 11A এখন কেবল একটা নম্বর নয়, এটা এখন এক বেঁচে ফেরার গল্প, এক নতুন জীবনের প্রতীক।
তথ্যসূত্র:
Bangkok Post (1998, Thai Airways crash)
- The Times of India (2025, AI171 crash)