স্কারাব ব্রেসলেট: তুতানখামুনের সমাধি থেকে উঠে আসা এক দেবতাস্বরূপ প্রতীক
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা আজও আমাদের বিমোহিত করে তাদের জাদুকরী প্রতীক, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সূক্ষ্ম কারুশিল্পের মাধ্যমে। এর এক অনন্য নিদর্শন হলো স্কারাব ব্রেসলেট, যা বিখ্যাত মিশরীয় রাজা তুতানখামুনের সমাধি থেকে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এই ব্রেসলেট কেবল অলংকার ছিল না; এটি এক মহৎ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চেতনার প্রতীক।
অলংকারের উপাদান ও কারুশিল্প
এই স্কারাব ব্রেসলেট তৈরি করা হয়েছিল সোনা, ল্যাপিস-লাজুলি, কার্নেলিয়ান, ফিরোজা, এবং আরও কিছু আধা-মূল্যবান পাথর দিয়ে। প্রতিটি উপাদানই ছিল ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐশ্বরিক শক্তির প্রতীক। প্রাচীন মিশরের কারিগররা এতটাই নিখুঁত দক্ষতায় এগুলো তৈরি করতেন যে আজ হাজার হাজার বছর পরেও সেই শিল্পকর্মের সৌন্দর্য অমলিন রয়ে গেছে।
স্কারাবের ধর্মীয় তাৎপর্য
স্কারাব, অর্থাৎ গোবর পোকা, প্রাচীন মিশরীয় ধর্মীয় বিশ্বাসে ছিল এক দেবতাস্বরূপ প্রতীক। এটি সূর্যোদয়ের দেবতা খেপরি (Khepri)-র সঙ্গে সম্পর্কিত, যিনি প্রতিদিন সকালে সূর্যকে আকাশে গড়িয়ে তুলতেন বলে বিশ্বাস করা হতো। স্কারাব ছিল নবজন্ম, রূপান্তর এবং সৃষ্টির প্রতীক।
চিত্রকলায় স্কারাবকে প্রায়ই মানুষের শরীর এবং পোকাটির মাথা নিয়ে চিত্রিত করা হয়েছে—একধরনের আলোকে রূপান্তরিত আত্মার রূপক হিসেবে। সাধারণ মানুষের কাছে স্কারাব ছিল এক তাবিজস্বরূপ প্রতিরক্ষা প্রতীক, যা মৃত্যুর পর জীবনের নিশ্চয়তা ও আত্মার পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচিত হতো।
একটি নিছক অলংকার নয়
তুতানখামুনের স্কারাব ব্রেসলেট শুধু একটি অলংকার নয়; এটি ছিল ধর্ম, রাজনীতি, আত্মার বিশ্বাস এবং শিল্পকলার এক অভূতপূর্ব সমন্বয়। সমাধির গহনে থাকা এই নিদর্শন আমাদের জানিয়ে দেয় প্রাচীন মিশরের মানুষদের জগৎ-দৃষ্টির গভীরতা এবং তাদের মৃত্যুকে ঘিরে গড়ে ওঠা পরম আধ্যাত্মিক উপলব্ধি।
আজ এই ব্রেসলেট দাঁড়িয়ে আছে এক অমর স্মারক হিসেবে—যা একদিকে যেমন মিশরীয়দের সূক্ষ্ম কারুশিল্পের সাক্ষ্য দেয়, তেমনি অন্যদিকে প্রাচীন বিশ্বে মানুষের আত্মা, বিশ্বাস এবং জীবনের গভীর দর্শনের প্রতি আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
তথ্যসূত্র
Carter, Howard. The Tomb of Tutankhamun. London: Cassell & Company, 1923.
British Museum – Collections: Scarab amulets
The Met Museum – Scarab Bracelet of Tutankhamun