হুঞ্জা উপত্যকা দীর্ঘায়ু ও রোগমুক্ত জীবনের এক আশ্চর্য্য ঠিকানা
পৃথিবীর এক নিভৃত কোণে—যেখানে ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্ত মিলে গেছে—সেখানেই অবস্থিত গিলগিট-বাল্টিস্তানের হুঞ্জা উপত্যকা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া এই জায়গাটি শুধু পর্যটকদের জন্য নয়, বরং গবেষকদের কাছেও এক বিস্ময়ের নাম, কারণ এখানকার মানুষ বেঁচে থাকেন ১২০ থেকে ১৬৫ বছর পর্যন্ত, তাও প্রায় রোগমুক্তভাবে।
কেন এত সুস্থ ও দীর্ঘজীবী হুঞ্জার মানুষ?
হুঞ্জা উপজাতির জনসংখ্যা প্রায় ৮৭,০০০। তারা এমন এক জীবনযাপন করেন যা আধুনিকতা থেকে অনেকটাই দূরে। তাদের জীবনের মূলমন্ত্র হল প্রকৃতির সঙ্গে সাদামাটা ও ভারসাম্যপূর্ণ সহাবস্থান। এঁদের মধ্যে বহুজন ১০০ বছরের বেশি বয়সেও কর্মক্ষম এবং রোগমুক্ত।
বিশেষভাবে লক্ষণীয়:
৬৫ বছর বয়সেও হুঞ্জা নারীরা যুবতী বলে মনে হয়।
অনেকে এই বয়সেও সন্তানধারণে সক্ষম।
ক্যানসার বা টিউমারের মতো রোগ এখানে প্রায় অনুপস্থিত।
দীর্ঘায়ুর রহস্য: তাদের জীবনের সহজ কিন্তু কার্যকর অভ্যাসগুলো
❖ প্রতিদিন ১৫-২০ কিমি হাঁটা
❖ অল্প খাওয়া, কিন্তু পরিশ্রম বেশি
❖ বরফঠান্ডা ঝর্ণার জলে স্নান
❖ প্রচুর মধু খাওয়া
❖ নিজেদের উৎপাদিত প্রাকৃতিক শস্য, ফল ও সবজি খাওয়া
❖ জীবনে অতিরিক্ত মানসিক চাপ নেই—তাদের হাসি প্রাণবন্ত ও উচ্ছ্বসিত
ভূগোল ও অবস্থান
হুঞ্জা উপত্যকা পাকিস্তানের সবচেয়ে উত্তরের প্রশাসনিক অঞ্চলে অবস্থিত, আগে যেটি ‘উত্তরাঞ্চল’ নামে পরিচিত ছিল। এটি দক্ষিণে কাশ্মীর, পশ্চিমে খাইবার পাখতুনখোয়া, উত্তরে আফগানিস্তানের ওয়াখান করিডোর, পূর্বে চীনের জিনজিয়াং এবং দক্ষিণ-পূর্বে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর দ্বারা বেষ্টিত।
শেষ কথা
হুঞ্জা উপত্যকা শুধু একটি ভৌগোলিক স্থান নয়, বরং এটি যেন প্রকৃতি-নির্ভর সুস্থ জীবনের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। আজকের যান্ত্রিক ও চাপপূর্ণ জীবনে হুঞ্জা আমাদের শেখায়—স্বাস্থ্যই আসল সম্পদ, আর প্রকৃতিই তার শ্রেষ্ঠ উৎস।